পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Str গল্পসংগ্ৰহ শ্যামলালের স্ত্রী বরাবর তঁর সঙ্গেই ছিলেন ; কিন্তু তঁর মনে সুখও ছিল না, সন্তোষও ছিল না ; কেননা যে সব জিনিসের অভাব শ্যামলাল একদিনের জন্যও বোধ করেননি, তার স্ত্রী সে সকলের-অর্থাৎ আত্মীয়স্বজনের অভাব, মেলামেশার লোকের অভাব, এমন কি কথা কইবাধ লোকের পর্যন্ত অভাব-প্রতিদিন বোধ করতেন। চাকরির প্রথম বৎসর না যেতেই শ্যামলালের একটি ছেলে হয়। সেই ছেলে হবার পর থেকেই তার স্ত্রী শুকিয়ে যেতে লাগলেন, ফুল যেমন করে শুকিয়ে যায়, তেমনি করে, অর্থাৎ অলক্ষিতে এবং নীরবে। শ্যামলাল কিন্তু তা লক্ষ্য করলেন না। শ্যামলাল ছিলেন এক-বুদ্ধির লোক । তিনি যে কাজ হাতে নিতেন, তাতেই মগ্ন হয়ে যেতেন ; তার বাইরের কোনও জিনিসে তার মনও যেত না, তার চোেখও পড়ত না । তা ছাড়া তার স্ত্রীর অবস্থা কি হচ্ছে, তা লক্ষ্য করবার তার অবসরও ছিল না। ঘুম থেকে উঠে তিনি রায় লিখতে বসতেন ; সে লেখা শেষ করে তিনি আপিসে যেতেন ; আপিস থেকে ফিরে এসে আইনের বই পড়তেন ; তারপর রাত্তিরে আহারান্তে নিদ্ৰা দিতেন। তার স্ত্রী এই বনবাস থেকে উদ্ধার পাবার জন্য স্বামীকে কোন লোকালয়ে বদলি হবার চেষ্টা করতে বারবার অনুরোধ করতেন, কিন্তু শ্যামলাল বরাবর একই উত্তর দিতেন। তিনি বলতেন, “তোমরা স্ত্রীলোক, ও সব বোঝা না ; চেষ্টা চরিত্তির করে এ সব জিনিস হয় না। কাকে কোথায় রাখবে, সে সব উপরওয়ালারা সবদিক ভেবে চিন্তে ঠিক করে। তার আর বদল হবার জো নেই।” আসল কথা এই যে, তিনি বদলি হবার কোনও আবশ্যকতা বোধ করতেন না, কেননা তঁর কাছে লোকসমাজ বলে কোন পদার্থের অস্তিত্বই ছিল না। আর তা ছাড়া সাহেৰু-সুবোর কাছে উপস্থিত হয়ে দরবার করা, তঁর সাহসে কুলোেত না। তঁর স্ত্রী অবশ্য এতে অত্যন্ত দুঃখিত হতেন, কেননা তিনি একথা বুঝতেন না যে, নিজ চেষ্টায় কিছু করা তার স্বামীর পক্ষে ख्ाजgय । ফলে, আলো ও বাতাসের অভাবে ফুল যেমন শুকিয়ে যায়,