পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একটি সাদা গল্প S RS শ্যামলালের স্ত্রী তেমনি শুকিয়ে যেতে লাগলেন। আমি ঘুরে ফিরে ৯ ফুলের তুলনাই দিচ্ছি, তার কারণ শুনতে পাই সেই ব্ৰাহ্মণকন্যা শরীরে ও মনে ফুলের মতই সুন্দর, ফুলের মতই সুকুমার ছিলেন, এবং তার বাঁচবার জন্যে আলো ও বাতাসের দর্শন ও স্পর্শনের প্রয়োজন ছিল। ছেলে হবার চার বৎসর পরে তিনি একটি কন্যাসন্তান প্রসব করে আঁতুড়েই মারা গেলেন। তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুতে শ্যামলাল অতিশয় কাতর হয়ে পড়লেন। তিনি তার স্ত্রীকে যে কত ভালবাসতেন, তা তিনি স্ত্রী বর্তমানে বোঝেননি, তার অভাবেই মর্মে মৰ্মে অনুভব করলেন। জীবনে তিনি এই প্রথম শোক পেলেন ; কেননা তার মা ও বাবা তাঁর শৈশবেই মারা যান, এবং তার কোন ভাইবোন কখন জন্মায়নি, সুতরাং মরেওনি। সেই সঙ্গে তিনি এই নতুন সত্যের আবিষ্কার করলেন যে, মানুষের ভিতর হৃদয় বলে একটা জিনিস আছে—যা মানুষকে শাসন করে, এবং মানুষে যাকে শাসন করতে পারে না । স্ত্রীর মৃত্যুতে শ্যামলাল এতটা অভিভূত হয়ে পড়লেন যে, তিনি নিশ্চয়ই কাজকর্মের বার হয়ে যেতেন, যদি না তীর একটি চার বৎসরের ছেলে আর একটি চার দিনের মেয়ে থাকত। তার মন ইতিমধ্যে র্তার অজ্ঞাতসারে জীবনের মধ্যে অনেকটা শিকড় নামিয়েছিল। তিনি দেখলেন যে, এই দুটি ক্ষুদ্র প্রাণী নিতান্ত অসহায়, এবং তিনি ছাড়া পৃথিবীতে এদের অপর কোন সহায় নেই। তাঁর নব-আবিষ্কৃত হৃদয় তীর চােখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে যে, চাকরির দাবী ছাড়া পৃথিবীতে আরও পাঁচ রকমের দাবী আছে, এবং কলেজ ও আদালতের পরীক্ষা ছাড়া মানুষকে আরও পাঁচ রকমের পরীক্ষণ দিতে হয়। তঁর মনে এই ধারণা জন্মাল যে, তিনি তাঁর স্ত্রীকে অবহেলা করেছেন ; এ জ্ঞান হওয়ামাত্র তিনি মনস্থির করলেন যে, তার ছেলে-মেয়ের জীবনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব তিনি নিজের এবং একমাত্র নিজের ঘাড়েই নেবেন। স্বামী হিসেবে তার কর্তব্য না-পালন করা রূপ পাপের প্ৰায়শ্চিত্ত তিনি সন্তানপালনের দ্বারা করতে দৃঢ়সঙ্কল্প হলেন। እዓ