পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একটি সাদা গল্প ని উদ্যোগ করলেন না ; যদিচ তখন তার বয়েস প্রায় ষোল। তার মেয়ের জন্য যে একটি স্বামী-দেবতা কোন অজ্ঞাত গোকুলে বাড়ছে, এবং সে স্বামী যে দেবতুল্য হবে, সে বিষয়ে তঁর মনে কোন সন্দেহ ছিল না। এই সময়ে শ্যামলালের জীবনে একটি অপূর্ব ঘটনা ঘটল। একদিন তিনি তঁর কর্মস্থলে তারে খবর পেলেন যে বীরেন্দ্রলাল কোন পলিটিকাল অপরাধে কলকাতায় গ্রেপ্তার হয়েছে। সেই সঙ্গে তার বাড়ীর খানাতল্লাসী হল। তার ছেলের যে কস্মিনকালে ফৌজদারী আদালতে বিচার হতে পারে, এ কথা তিনি কখন স্বপ্নেও ভাবেননি । সুতরাং এ সংবাদে তিনি একেবারে হতবুদ্ধি হয়ে পড়লেন। ব্যাপারটা তঁর কাছে এতই নতুন লাগল যে, এ ক্ষেত্রে তঁর কি করা কর্তব্য তিনি ঠাউরে উঠতে পারলেন না। এর পর শ্যামলালের দেহমানে এমন অবসাদ, এমন জড়তা এসে পড়ল যে, তঁর পক্ষে আর কাজ করা সম্ভব হল না। তিনি এক বৎসরের ছুটির দরখাস্ত করলেন ; এবং সে দরখাস্ত তখনই মঞ্জুর তল। কেননা উপরওয়ালদের মতে, তঁর ছেলের মতিভ্ৰংশতার জন্য শ্যামলাল যে কতকটা দায়ী, তার প্রমাণ র্তার ঘরের বই। এ শুনে শ্যামলাল অবাক হয়ে গেলেন। তিনি জানতেন, হিস্টরি হচ্ছে শুধু পড়বার জিনিস, মানুষের জীবনের সঙ্গে তার যে কোন যোগাযোগ থাকতে পারে এ কথা পূর্বে কখন তাঁর মনে হয়নি। নূতনের সঙ্গে কারবার করবার অভ্যাস র্তার ছিল না। কাজেই তঁাকে তঁর মেয়ের পরামর্শমত চলতে হল। তিনি উকিল কেঁীগুলি দিয়ে বীরেন্দ্রলালকে রক্ষা করবার চেষ্টা করলেন। ফলে, তঁর ছেলে রক্ষা পেলে না ; মধ্যে থেকে তঁর যা-কিছু টাকা ছিল, সব উকিল কীেসুলির পকেটে গেল। এই নতুনের সংঘর্ষে শ্যামলালের জীবনের জোড়া-সুখস্বপ্নের মধ্যে একটি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল, আর তার কন্যার ফুটন্ত ফুলের মত মনটির উপর বরফ পড়ে গেল ।