পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

w8 গল্পসংগ্ৰহ ( 8 ) ছুটি নিয়ে শ্যামলাল বাড়ী যাবেন স্থির করলেন। আজ বিশ বৎসর পর তঁর মনে আবার দেশের মায়া জেগে উঠল। তার মনে ছেলেবেলাকার সুখের স্মৃতি সব ফিরে এল ; তঁর মনে হল, তাঁর পূর্বপুরুষের বাস্তুভিটাই হচ্ছে পৃথিবীতে একমাত্র স্থান যেখানে শান্তি আছে,-ও যেন মায়ের কোল । শ্যামলাল সেই মায়ের কোলে ফিরে গেলেন । কিন্তু র্তার কপালে সেখানেও শান্তি জুটল না। দেশে পদাৰ্পণ করবামাত্র তিনি ঘোরতর অশান্তির মধ্যে পড়ে গেলেন । তার আত্মীয়স্বজনেরা একবাক্যে তাকে ছিা ছিা করতে লাগল। মেয়ে এত বড় হয়েছে অথচ বিয়ে হয়নি, তার উপর সে আবার পুরুষের মত লেখাপড়া জানে,-এই দুই অপরাধে তীর মেয়েকেও দিবারাত্ৰ নানারূপ লাঞ্ছনাগঞ্জনা সহ্য করতে হল। এই লোকনিন্দায় শ্যামলাল এতটা ভয় খেয়ে গেলেন যে, তিনি মেয়ের বিয়ের জন্য একেবারে উতলা হয়ে উঠলেন। পাঁচজনের বিরুদ্ধে দাড়াবার শক্তি শ্যামলালের ধাতে ছিল না । তঁর মেয়ের জন্য পাত্ৰ খোঁজার ভার শ্যামলাল তার খুড়োর হাতে দিলেন। র্তার খালি এই একটি সর্ত ছিল যে, পাত্র পাস-করা ছেলে হওয়া চাই । তঁর মেয়ে যে মূর্থের হাতে পড়বে, একথা ভাবতেও তার বুকের রক্ত জল হয়ে যেত। কিন্তু তঁর এ পণ বেশি দিন টিকল না, কেননা ও মেয়েকে বিয়ে করতে কোনও পাস-করা যুবক স্বীকৃত হল না। w কারও কারও নারাজ হবার কারণ হল, মেয়ের বয়েস। যদিচ তার বয়েস তখন ষোল, তবু জনরবে স্থির হল বিশ। এ-ও শ্যামলালের খুড়োর দোষে। তিনি প্রমাণ করতে চাইলেন,--শ্ৰীমতীর বয়েস বারো, পশ্চিমের আবহাওয়ার গুণে বাড়টা কিছু বেশি হয়েছে বলে, দেখতে ষোল দেখায়। তিনি যদি নাতনীর বয়স চার বৎসর কমাতে না চেষ্টা করতেন, তাহলে আমার বিশ্বাস লোকমুখে তা চার বৎসর বেড়ে যেত না ।