পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

为登8 外邵@ বছর কয়েক আগে বোধ হয় জানি যে, পাটের কারবারে একটা বড় গোছের মার খেয়ে বাবার ধন ও প্ৰাণ দুই-ই এক সঙ্গে যায়। ফলে আমরা একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ি। তারপর এই চাকরিতে ঢুকে মাির অনুরোধে বিয়ে করতে রাজি হলুম। ব্যাপারটা অনেক দূর এগিয়ে এসেছিল ; আমি অবশ্য মেয়ে দেখিনি, কিন্তু পাকা দেখাও হয়ে গিয়েছিল। এমন সময়ে আবার একখানি চিঠি পেলুম, লেখা সেই স্ত্রী-হস্তের। সে চিঠির মোদী কথা এই যে, লেখিকা বিধবা হয়েছেন এবং সেই সঙ্গে কপর্দক-শূন্য। দে-সাহেব তার উইলে তাঁর স্ত্রীকে এক কড়াও দিয়ে যাননি। তঁর চিরজীবনের সঞ্চিত ঘুষের টাকা তিনি তঁর কন্যারত্নকে দিয়ে গিয়েছেন । এ ক্ষেত্রে খোরপোষের মামলা করা কর্তব্য কি না, সে বিষয়ে তিনি আমার পরামর্শ চেয়েছিলেন। আমি প্ৰত্যুত্তরে মামলা করা থেকে তঁকে নিবৃত্ত করে, র্তার সংসারের ভার নিজের ঘাড়ে নিয়েছি। ভেবে দেখ দেখি, যে গল্পটা তোমাদের বললুম, সেটা আদালতে কি বিশ্ৰী আকারে দেখা দিত। বলা বাহুল্য, এর পর আমার বিয়ের সম্বন্ধ ভেঙ্গে দিলুম, মা বিরক্ত হলেন, কন্যাপক্ষ রাগ করলেন, দেশশুদ্ধ লোক নিন্দে করতে লাগল, কিন্তু আমি তাতে টলিলুম না। কেননা, দু’সংসার চালাবার মত রোজগার আমার নেই।” —“দেখি তুমি অদ্ভুত কথা বলছি, একটি হিন্দু বিধবার আর কি লাগে, মাসে দশ টাকা হলেই ত চলে যায়, তা আর তুমি দিতে পার না ?” —“যদি দশ টাকায় হত, তাহলে আমি পাকা দেখার পর বিয়ে ভেঙ্গে দিয়ে সমাজে দুর্নামের ভাগী হতুম না। সে এক নয়, তার বাপ মা আছে, তারা যে হতদরিদ্র তা বোধ হয়, তাদের দে-সাহেবকে কন্যাদান থেকেই বুঝতে পাের। তারপর আমি যে ঘটনার উল্লেখ করেছি। তার সাত মাস পরে তার ষে কন্যাসন্তান হয়, সে এখন বড় হয়ে উঠছে। এই সবকটির অন্নবস্ত্রের সংস্থান আমাকেই করতে হয়, আর তা অবশ্য দশ টাকায় হয় না।”