পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

नील-जाश्७ि › ዓ ጎ প্ৰাণ ছিল, তেজ ছিল, রস ছিল, তা কথায় বোঝান অসম্ভব। তিনি যখন কোন ধ্বনির বর্ণনা করতেন, তখন তঁর কাণের দিকে দৃষ্টিপাত করলে মনে হত যে, তিনি যেন সে শব্দ সত্য সত্যই সকৰ্ণে শুনতে পাচ্ছেন। তাজি ঘোড়াকে ছারতকে ছাড়ােল সে চলতে চলতে ধখন গরম হয়ে ওঠে, আর তার নাকের ডগা যেমন ফুলে ওঠে ও সেই সঙ্গে একটু একটু কঁাপিতে থাকে, নীল-লোহিত গল্প বলতে বলতে গরম হয়ে উঠলে তার নাকের ডগাও তেমনি বিস্ফারিত ও বেপথুমান হত। আর তার চােখ ?—এমন অপূর্ব মুখর চোখ আমি আর কোনও লোকের কপালে। আর কখন দেখিনি। গল্প বলবার সময় তাঁর দৃষ্টি আকাশে নিবদ্ধ থাকত, যেন সেখানে একটি ছবি ঝোলান আছে, আর নীললোহিত সেই ছবি দেখে দেখে তার বর্ণনা করে যাচ্ছেন। সে চোখের তারা ক্ৰমান্বয়ে ডান থেকে বীয়ে আর বঁা থেকে ডাঙ্গনে যাতায়াত করত; যাতে করে ঐ আকাশপটের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত তার সমগ্র রূপটা এক মুহূর্তের জন্যও তাঁর চােখের আড়াল না হয়, এই উদ্দেশ্যে। তারপর তীর মনে যখন তীব্র, কোমল, প্রসন্ন, বিষন্ন, সতেজ, নিস্তেজ ভােব উদয় হত, তাঁর চক্ষুদ্বয়ও সেই ভাবের অনুরূপ কখন বিস্ফারিত, কখন সঙ্কুচিত, কখন ক্রস্ত, কখন প্রকৃতিস্থ, কখন উদ্দীপ্ত, কখন স্তিমিত হয়ে পড়ত। আর কথু তীর মুখ দিয়ে এমনি অনর্গল বেরত যে, আমাদের মনে হত যে, নীল-লোহিত মানুষ নয়, একটা জ্যান্ত গ্রামোফোন। আর তাতে ভগবান নিজ হাতে দম দিয়ে দিয়েছেন। বন্ধুবান্ধবরা সবাই বলতেন যে, নীল-লোহিতের তুল্য মিথ্যাবাদী পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় নেই। যদিচ আমার ধারণা ছিল অন্যরূপ, তবুও এ অপবাদের আমি কখন মুখ খুলে প্রতিবাদ করতে পারিনি। কেননা, এ কথা কারও অস্বীকার করবার যে ছিল না যে, বন্ধুবর ভুলেও কখন সত্য কথা বলতেন না। কথা সত্য না হলেই ধে তী মিথ্যা হতে হবে, এই হচ্ছে সাধারণত মানুষের ধারণা ; আর এ ধারণা যে ভুল, তা প্রমাণ করতে হলে মনোবিজ্ঞানের তর্ক তুলতে হয়, আঁর শে তর্ক আমার বন্ধুরা শুনতে একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না। ३७