পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নীল-লোহিত እ “ላእ ফেলি, তারপর যখন ওর পিঠে চড়ে বসব, তখন সে দড়ি ছিড়ে জঙ্গলের ভিতর এমনি ছুটবে যে, গাছের ধাক্কা লোগে আমাদের মাথা চুর হয় যাবে।” এ কথা শুনে নীল-লোহিত ‘দায়দার"দের damned coward বলে, এক ঝুলে কুনকির লেজ ছেড়ে দাতলার লেজ ধরে সেই লেজ বেয়ে উঠে তার কঁধে গিয়ে চড়ে বসলেন। মানুষের গায়ে মাছি বসলে তার যেমন অসোয়াস্তি হয়, দাতলাটারও তাই হল, আর সে তখনি তার শুড় ওঁচালে ঐ নররূপী মাড়িটাকে টিপে মেরে ফেলবার জন্য। এ বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার জন্য নীল-লোহিত কি করেছিলেন, জানেন ? তিনি তিলমাত্র দ্বিধা না করে উপুড় ঈয়ে পড়ে, দাতলাটার কাণে মুখ দিয়ে নিধুবাবুর একটা ভৈরবীর টপ্পা গাইতে শুরু করলেন, আর সেই মদমত্ত হস্তী অমনি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে চক্ষু নির্মালিত করে গান শুনতে লাগল। ঐ প্রণয়-সঙ্গীত শুনে হাৰ্তা বেচারা এমনি তন্ময়, এমনি বাহাজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছিল যে, ইত্যািরসরে দায়দার"রা যে তার চারটি পা মোটা মোটা শোণের দড়ি দিয়ে আটঘাটে বেঁধে ফেলেছে, সে তা টেরও পেলে না। ফলে দাতলার নড়বার চড়বার শক্তি আর রইল না। সে হাতী এখন মহারাজ কিরাতনাথের তাঁতীশালায় বাঁধা আছে । মহারাজ কিরাতনাথ কে ?-এ প্রশ্ন করলে নীল-লোহিত ভারি চােট যেতেন। তিনি বলতেন, ওরকম করে বাধা দিলে তিনি গল্প বলতে পারবেন না। আর যেহেতু তাঁর গল্প আমরা সবাই শুনতে চাইক্ৰম, সেই জন্যে পাছে তিনি গল্প বলা বন্ধ করে দেন, এই ভয়ে ঐ সব বাজে প্রশ্ন করা আমরা বন্ধ করে দিলুম। কারণ, সকলে ধরে নিলে যে নীললোহিতের গল্প সৰ্বৈৰ মিছে, ও গল্প শোনাদার জিনিষ, কিন্তু বিশ্বাস করবার জিনিষ নয়। কেননা এ কথা বিশ্বাস করা শক্তি যে, নীললোহিত সতেরবার ঘোড়া থেকে পড়েছিলেন, আর তার একবার দাৰ্জিলিংয়ে ঘোড়াসুদ্ধ দু'হাজার ফুট নীচে খাদে, অথচ তাঁর গায়ে কখন একটি আঁচড়ও যায়নি, যদিচ পড়বার সময় তিনি সুঘোটক শূন্যে দু’বার ডিগবাজী খেয়েছিলেন। নীল-লোহিত তিনবার জলে ডুবেছিলেন;