পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sbr • १२छ् যেখানে তিস্তা এসে ব্ৰহ্মপুত্রে মিশেছে, সেখানে একবার চড়ায় লেগে জাহাজের তলা ফেসে যায়, সকলে ডুবে মারা যায়, একমাত্র নীল-লোহিত পাচ মাইল জল সাঁতরে শেষটা রোউমারিতে গিয়ে উঠেছিলেন। আর একবার মেঘনায় জাহাজ ঝড়ে সোজা ডুবে যায় ; সেবারও তিনি তিন দিন তিন রাত ঐ জাহাজের মাস্তুলের ডগায় পদ্মাসনে বসে ধ্যানস্থ ছিলেন ; অন্য জাহাজ এসে তাঁকে তুলে নিলে। আর শেষবার মাতলার মোহানায় জাহাজ উল্টে যায়, তিনি ঐ জাহাজের নীচেই চাপ৷ পড়েছিলেন, কিন্তু ডুব-সাঁতার কাটতে কাটতে তিনি ঐ জাহাজের হাল ধরে ফেললেন, আর ঐ হাল বেয়ে তিনি ঐ জাহাজের উল্টো পিঠে গিয়ে চড়ে বসলেন। ঐ উল্টান জাহাজ ভাসতে ভাসতে সমুদ্র গিয়ে পড়ে। তারপর একখানা জার্মান মানোয়ারী জাহাজ তাঁকে তুলে নেয়, আর সেই জাহাজেই কাইজারের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। কাইজার নাকি বলেছিলেন যে, নীল-লোহিত যদি তীর সঙ্গে জার্মানীতে যান, তাহলে তিনি তাকে সাবমেরিনের সর্বপ্রধান কাপ্তেন করে দেবেন। যে মাইনে কাইজার তীকে দিতে চেয়েছিলেন, তাতে তার পোষায় না। বলে তিনি সে প্ৰস্তাব অগ্রাহ করেন। এ সব নীল-লোহিতের কথাবস্তুর নমুনাস্বরূপ উল্লেখ করলুম, কিন্তু তার কথারাসের বিন্দুমাত্র পরিচয় দিতে পারলুম না। তুফানের বর্ণনা, সমুদ্রের বর্ণনা তার মুখে না শুনলে, গুণীর হাতে পড়লে জলের ভিতর থেকে যে কি আশ্চর্য রৌদ্ররস বেরয়, তা কেউ আন্দাজ করতে পারবেন না। নীল-লোহিতকে দিয়ে গল্প লেখাবার চেষ্টা করেছিলুম; কেননা গল্প তিনি আর বলেন না। তিনি আমার অনুরোধে একটি গল্প লিখেওছিলেন। কিন্তু সেটি পড়ে দেখলুম, তা একেবারে অচল। সে গল্প প্ৰথম থেকে শেষ লাইন তাক পড়ে দেখি যে, তার ভিতর আছে শুধু সত্য, একেবারে আঁককষা সত্য, কিন্তু গল্প মোটেই নেই। সুতরাং বুঝলুম যে, তাঁর দ্বারা আমাদের সাহিত্যের কোনরূপ শ্ৰীবৃদ্ধি হবার সম্ভাবনা নেই। তিনি কেন যে গল্প বলা ছেড়ে দিলেন, তার ইতিহাস এখন শুনুন।