পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নীল- লোহিত >br〉 বাঙলায় যখন স্বদেশী ডাকাতি হতে সুরু হল, তখন পাঁচজন একত্র হলেই ঐ ডাকাতির বিষয় আলোচনা হত। খবরের কাগজে ঐ রকম একটা ডাকাতির রিপোর্ট পড়ে, অনেকের কল্পনা অনেক রকমে খেলত। কথায় কথায় সে রিপোর্ট ফেঁপে উঠত, ফুলে উঠত। কেউ বলতেন, ছেলেরা একটানা বিশ ক্রোশ দৌড়ে পালিয়েছে, কেউ বলত, তারা তেতলার ছাদ থেকে লাফ মেরে পড়ে পিটুটান দিয়েছে। একদিন আমাদের আড়ায় এই সব আলোচনা হচ্ছে, এমন সময় নীল-লোহিত বললেন যে, “আমি একবার এক ডাকাতি করি, তার বৃত্তান্ত শুনুন।” তঁর সে বৃত্তান্ত আদ্যোপােন্ত লিখতে গেলে একখানি প্ৰকাণ্ড উপন্যাস হয়, সুতরাং ডাকাতি করে তীর পালােনর ইতিহাসটি সংক্ষেপে বলছি । নীল-লোহিত উত্তরবঙ্গে এক সা মহাজনের বাড়ী ডাকাতি করতে যান। রাত দশটায় তিনি সে বাড়ীতে গিয়ে ওঠেন। এক ঘণ্টার ভিতর সেখানে গ্রামের প্রায় হাজার চাধা এসে বাড়ী ঘেরাও পালাবার আর উপায় নেই, তখন তিনি চট করে তীর পণ্টনি সাজ খুলে ফেলে, একটি বিধবার পরণের একখানি সাদা শাড়ী টেনে নিয়ে, সেইখানি মালকেঁচা মেরে পরে, পা টিপে টিপে খিড়কির দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। লোকে তঁকে বাড়ীর চাকর ভেবে আর বাধা দিলে ন। একটু পরেই লোকে টের পেলে যে, ডাকাতের সর্দার পালিয়েছে, অমনি দেদার লোক তঁর পিছনে ছুটতে লাগল, মাইল দশেক দৌড়ে যাবার পর তিনি দেখলেন যে রাস্তার দু’পাশের গ্রামের লোেকরাও তঁাকে তাড়া করছে। শেষটায় তিনি ধরা পড়েন। পড়েন, এমন সময় তঁর নজর পড়ল যে একটা বৰ্মা-টাটু একটা ছোলার ক্ষেতে চরছে ; তার পিছনের পা দুটা দড়ি দিয়ে চাঁদ। নীল-লোষ্ঠিত প্ৰাণপণে ছুটে গিয়ে তার পায়ের দড়ি খুলে, তার মুখের ভিতর সেই দড়ি পূরে দিয়ে, তাতে এক পেচ লাগিয়ে সেটিকে লাগাম বানালেন। তারপর সেই ঘোড়ায় চড়ে—দে ছুটু! রাত বারোটা থেকে রাত দুটাে পর্যন্ত সে টাটু, বিচিত্র চালে চলতে লাগল, কখনও কদমে, কখনও দুলকিতে, কখনও চার-পা