পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉b R *iछँग९%lठू তুলে লাফিয়ে লাফিয়ে। জীবনে এই একটিবার তিনি ঘোড়া থেকে পড়েননি। তারপর সে টাটু, হঠাৎ থেমে গেল। নীল-লোহিত দেখলেন, সুমুখে একটা প্ৰকাণ্ড বিল-অন্তত তিন মাইল চওড়া। অমনি ঘোড় থেকে নেমে নীল-লোহিত সেই বিলের ভিতর ঝাপিয়ে পড়লেন। পাছে কেউ দেখতে পায়, এই ভয়ে প্রথম মাইল তিনি ডুব-সাঁতার কেটে পার হলেন, দ্বিতীয় মাইল এমনি সাঁতার, আর তৃতীয় মাইল চিৎ-সীতার দিয়ে, এই জন্য যে, পাড় থেকে কেউ দেখলে ভাববে যে, একটা মড়া ভেসে যাচ্ছে। নীল-লোহিত যখন ওপারে গিয়ে পৌছলেন, তখন ভোর হয় হয়। ক্লান্তিতে তখন তঁর পা আর চলছে না। সুতরাং বিলের ধারে একটি ছোট খোড়ে ঘর দেখবামাত্র তিনি ‘যা থাকে কুল-কপালে’ বলে সেই ঘরের দুয়ারে গিয়ে ধাক্কা মারলেন। তৎক্ষণাৎ দুয়ার খুলে গেল, আর ঘরের ভিতর থেকে বেরিয়ে এল একটি পরমাসুন্দরী যুবতী। তার পরণে সাদা শাড়ী, গলায় কণ্ঠা, আর নাকে রসিকলি । নীল-লোহিত বুঝতে পারলেন যে, স্ত্রীলোকটি হচ্ছে একটি বোষ্টমী, আর সে থাকে একা। নীল-লোহিত সেই রমণীকে তার বিপদের কথা জানালেন । শুনে তার চোখে জল এল, আর সে তিলমাত্র দ্বিধা না করে নীল-লোহিতের ভালবাসায় পড়ে গেল। আর সেই সুন্দরীর পরামর্শে নীল-লোহিত পরণের ধুতি শাড়ী করে পরলেন। আর সেই যুবর্তী নিজ হাতে র্তার গলায় কণ্ঠী পর্যালে, আর তার নাকে রসিকলি-ভঞ্জন করে দিলে। গুস্ফ-শুশ্রীহীন নীল-লোহিতের মুখাকৃতি ছিল একেবারে মেয়ের মত। সুতরাং তঁর এ ছদ্মবেশ আর কেউ ধরতে পারলে না। তারপরে তারা দু-সখীতে দুটি খঞ্জনি নিয়ে “জয় রাধে” বলে বেরিয়ে পড়ল ; তারপর পায়ে হেঁটে ভিক্ষে করতে করতে বৃন্দাবন গিয়ে উপস্থিত হল। তারপর কিছুদিন মেয়ে সেজে বৃন্দাবনে গা-ঢাকা দিয়ে থাকবার পর, পুলিসের গোলমাল যখন থেমে গেল, তখন তিনি আবার দেশে ফিরে এলেন। আর তঁর সেই পথে-বিবর্জিত বোষ্টমী মনের দুঃখে কঁদিতে কঁাদতে বাঘনাপাড়ায় চলে গোল-কোনও দাড়িওয়ালা বোষ্টমের সঙ্গে কাষ্ঠীবদল করতে।