পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নীল-লোহিত্যের সৌরাষ্ট্র-লীলা r ( R ) নীল-লোহিত সুরাট গেছলেন বি. এন. আর. দিয়ে একটি প্যাসেঞ্জার গাড়ীতে, অর্থাৎ একেবারে একলা ; তাই তার সঙ্গে অপর কোন বাঙ্গালী ডেলিগেটের সাক্ষাৎ হয়নি। গাড়ী টিকতে ঢ়িকতে ছ’দিনের দিন সন্ধ্যেবেলায় সুরাট গিয়ে পৌঁছল। নীল-লোহিত সুরাট স্টেশনে নোেম একখানি টঙ্গা ভাড়া করে কংগ্রেস-ক্যাম্পের দিকে রওনা হলেন । গুজরাটে টঙ্গ অবশ্য একরকম গরুর গাড়ী, কিন্তু গুজরাটের গরু বাঙলার ঘোড়ার চাইতে ঢের মজবুত ও তেজী। তারা ঠিক তাজিঘোড়ার মত কদমে চলে, আর তাদের গলার ঘণ্টা গির্জার ঘণ্টার মতসারু-গম সাধে, আর বাইজীর পায়ের ঘুঙ্গারের মত তালে বাজে। গাড়ীতে ছ'দিন নীল-লোহিতকে একরকম অনশনেষ্ট কাটাতে হয়েছিল। সকালবেলায় এক গেলাস কঁচা দুধ ও রাত্তিরে এক মুঠো কঁচা ছোলার বেশি তার ভাগ্যে আর কিছু আহার জোটেনি। স্টেশনে স্টেশনে অবশ্য লাউড় পাওয়া যায়, কিন্তু সে লাড়ু আকারে ভাটার মত, আর সে চিজ দাঁতে ভাঙ্গাবার জো নেই, গিলে খেতে হয়, আর তা গেলবার জন্য গলার নলী হওয়া চাই ড়েণ-পাইপের মত মোটা। আর “পুরি” ?-- তার একখানা ছুড়ে মারলে নাকি প্রেসিডেণ্টকে আর দেশে ফিরতে হত না। পৃথিবীতে নাকি এমন জুতাে নেই,”ষার সুখতলা আকারে ও কাঠিন্যে তার কাছেও ঘেঁসিতে পারে। এক একখানি “পুরি” যেন এক একখানা খড়ম। সুতরাং নীল-লোহিত যদিও অনশনে মৃতপ্রায় হয়েছিলেন, তবুও সুরাটের বড় রাস্তার দৃশ্য দেখে তিনি ক্ষুধা তৃষ্ণ একদম ভুলে গেলেন। যতদূর যাও, পথের দুপাশে সব জানালাতে যেন সব পদ্মফুল ফুটে রয়েছে। গুর্জরে অবরোধপ্রথা নেই, আর গুর্জররমণীদের তুল্য সুন্দরী সুরপুরীতেও মেলা ভার। এ দৃশ্য দেখতে দেখতে তার মোহ উপস্থিত হল, যেন প্ৰতি জানালায় একটি করে Juliet, দাঁড়িয়ে আছে, আর তিনি হচ্ছেন স্বয়ং Romeo ; কিন্তু টঙ্গা এমনি ছুটে চলেছে যে, তিনি কারও কাছে kill the envious moon, এ কথা