পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 šiškáě বিশেষ অসুখ ছিল না, অথচ একটা প্রচ্ছন্ন জড়তা ক্ৰমে ক্ৰমে আমার সমগ্ৰ দেহটি আচ্ছন্ন করে ফেলছিল । শরীরের ইচ্ছাশক্তি যেন দিন-দিন লোপ পেয়ে আসছিল, প্রতি অঙ্গে আমি একটি অকারণ, একটি অসাধারণ শ্ৰান্তি বোধ করাতুম। এখন বুঝি, সে হচ্ছে কিছু না করবার শ্ৰান্তি। সে যাই হােক, ডাক্তাররা আমার বুক পিঠ ঠুকে আবিষ্কার করলেন যে, আমার যা রোগ তা শরীরের নয় মনের। কথাটি ঠিক,- তবে মনের অসুখটা যে কি, তা কোন ডাক্তার-কবিরাজের পক্ষে ধরা অসম্ভব ছিল-কেননা যার মন, সেই তা ঠিক ধরতে পারত না। লোকে যাকে বলে দুশ্চিন্তা অর্থাৎ সংসারের ভাবনা, তা আমার ছিল না—এবং কোনও স্ত্রীলোক আমার হৃদয় চুরি করে পালায়নি। হয়ত শুনলে বিশ্বাস করবে না, অথচ এ কথা সম্পূর্ণ সত্য যে, যদিচ তখন আমার পূর্ণ যৌবন, তবুও কোন বঙ্গযুবর্তী আমার চােখে পড়েনি। আমার মনের প্রকৃতি এতটা অস্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল যে, সে মনে কোনও অবলী সরলা ননীবালার প্রবেশাধিকার ছিল না । আমার মনে যে সুপ ছিল না, সোয়াস্তি ছিল না, তার কারণই ত এই যে, আমার মন সংসার থেকে আলগা হয়ে পড়েছিল। এর অর্থ এ নয় যে, আমার মনে বৈরাগ এসেছিল,-অবস্থা ঠিক তার উল্টো । জীবনের প্রতি বিরাগ নয়, আত্যন্তিক অনুরাগ বশতঃই আমার মন চারপাশের সঙ্গে খাপছাড়া হয়ে পড়েছিল। আমার দেহ ছিল এ দেশে, আর মন ছিল ইউরোপে। সে মনের উপর ইউরোপের আলো পড়েছিল, এবং সে আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেতুম যে, এ দেশে প্ৰাণ নেই ; আমাদের কাজ, আমাদের কথা, আমাদের চিন্তা, আমাদের ইচ্ছা-সবই তেজোহীন, শক্তিহীন, ক্ষীণ, রুগ্ন, মিয়মাণ এবং মৃতকল্প। আমার চোখে আমাদের সামাজিক জীবন একটি বিরাট পুতুল নাচের মত দেখাত। নিজে পুতুল সেজে, আর একটি সালঙ্কার পুতুলের হাত ধরে, এই পুতুল-সমাজে নৃত্যু করবার কথা মনে করতেও আমার ভয় হত। জানতুম তার চাইতে মরাও শ্ৰেয়: ; কিন্তু আমি মরতে চাইনি, আমি চেয়েছিলুম। বঁচিতে- শুধু দেহে নয়, মনেও বেঁচে উঠতে, ফুটে উঠতে, জ্বলে উঠত। এই বার্থ