পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নীল-লোহিতের স্বয়ম্বর እ እፂ মাদ্ৰাজী না মারাঠী ?” নীল-লোহিত উত্তর করলেন, “চিঠি শুনে কি মনে হল যে, ও চিঠি কোনও কাছা-কেঁচা দেওয়া মেয়ের হাত থেকে বেরতে পারে ? দুপাতা ইংরেজী পড়ে মাতৃভাষাও ভুলে গিয়েচ নাকি ?” --না, তা ভুলিনি। কিন্তু কোনও বাঙালী মেয়ের মালশী নাম কখনও শুনিনি। এমন কি হাল-ফেশানের নভেল-নাটকেও পড়িনি। —সে নিজের নাম নিজে রাখেনি, রেখেছে তার বাপ মা । --মেয়েটি কার মেয়ে ? --রাজা ঋষভরঞ্জন রায়ের একমাত্র সন্তান । বাপের নাম শুনে আমরা অনেকেই আর হাসি রাখতে পাৱলুম না। আমাদের হাসি দেখে ও শুনে নীল-লোহিত মহা চটে বললেন—“বােরবলী ভাষা পড়ে পড়ে যদি সাধুভাষ ভুল না যেতে, তাহলে আর অমন করে হাসতে না । এ ঋষভ সঙ্গীতের ঋষভ, বাঙলায় যাকে বলে রেখাল । নূরনগরের রাজপরিবারের ছেলেমেয়েদের নামকরণ করা হয় সঙ্গীতাচাৰ্যদের উপদেশমত। মালশ্রীর পিসীদের নাম হচ্ছে জয়জয়ন্তী ও পটমঞ্জরী, আর তার পিসতুত মেজদাদার নাম হচ্ছে নর্টনারায়ণ, আর বড়দাদার নাম ছিল দীপক। গান বাজনার যদি ক, খ, জানতে, তাহলে এগুলি যে সব বড় বড় রাগরাগিণীর নাম, তা আর আমাকে তোমাদের বলে দিতে হত না। বনেদী পরিবারের ছেলের নাম কি হলে পাঁচু, আর মেয়ের নাম পাঁচী ?” s নীল-লোহিতের এ বক্তৃতা শুনে রসিকলাল জিজ্ঞাসা করলেন“তাহলে এ পরিবারে সঙ্গীতের যথেষ্ট চর্চা আছে ?” নীল লোহিত বললেন-“রাজা ঋষভরঞ্জন পয়লা নম্বরের ধ্রুপদী। র্তার তুল্য বাজাঁই গলা কোনও গাঁজাখের ওস্তাদেরও নেই।” রসিকলাল উত্তর করলেন --"আমরা গান বাজনার ক, খ না জানি—এটা জানি যে ঋষভের গলা বাজখাই হয়ে থাকে।” এ কথা শুনে আমরা কোনমত প্রকারে হাসি চেপে রাখলুম, এই ভয়ে যে নীল-লােহিত আমাদের হার্সি দ্বিতীয়বার আর সহ করতে পারবেন না। নীল-লোহিত বললেন-“কথায় কথায় যদি বস্তাপচা রসিকতা কর, তাহলে আমি আর কথা কইব না৷ ”