পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নীল-লোহিতের আদিগ্ৰেম RSS পরে বলছি। তবে তার স্মৃতি আমার জীবনের বিচিত্র ইতিহাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত হয়ে রয়েছে। আমি এমন কোনও স্ত্রীলোকের সঙ্গে কখনও প্রেমে পড়িনি, যার মুখে আমি তার চেহারা দেখতে পাইনি। বর্ণ তার ছিল উজ্জ্বল শ্যাম, গড়ন ছিপছিপে, নাক তোলা, আর চোখ সাত রাজার ধন কালামাণিকের মত। আমি চিরজীবন তাকেই খুঁজে বেড়াচ্ছি, আর যখনই তার ঈষৎ পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত সংস্করণের সাক্ষাৎ পেয়েছি, তখনই আবার প্রেমে পড়েছি। এই কারণেই আমি বলেছি যে, আমার সব নতুন প্ৰেম আমার সেই আদিপ্রেমের reprint মাত্র। যখনই কোন নতুন প্রেমে পড়েছি, তখনই পৃথিবী একেবারে উল্টে-পাণ্টে গিয়েছে, ডুমুরের ফুল ফুটেছে, অমাবস্যায় জ্যোৎস্না ফুটেছে, আকাশকুসুমের গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে, এবং আমার মনে হয়েছে যেন আমি হঠাৎ জেগে উঠেছি, আর তার আগে ঘুমিয়েছিলুম। এই আর্দিপ্রেমের কৃপায় কোন ইংরেজ কিংবা জাপানী অথবা ইহুদা মেয়ের প্ৰেমে কখনও পড়িনি। কারণ ইংরেজের রং উজ্জ্বল শ্যাম নয়, চুনের মত সাদা; জাপানীর নাক তোলা নয়, চাপা ; আর ইহুদীদের নাক হাতীর শুড়ের মত লম্বা। এখন আমাদের কি কারণে বিচ্ছেদ ঘটল, তা শোন । তারপর নীল-লোহিত বললেন যে, পরের দিন বালিকা-বিদ্যালয় থেকে তঁর ইংরেজী স্কুলে বদলি হবার কথা ছিল; কিন্তু তিনি বালিকাবিদ্যালয়রূপ স্বৰ্গ হতে ভ্ৰষ্ট হতে কিছুতেই রাজী হলেন না। তার মা নিলেন তঁর পক্ষ, আর বিপক্ষ হলেন তাঁর বাবা। এ দুজনের মধ্যে অনেক বকাবিকি হল; শেষটায় নীল-লোহিতের জেদই বজায় রইল। তাঁর বাবা, “এটার ছেলে না হয়ে মেয়ে হয়ে জন্মান উচিত চিলা-এই কথা বলে মার সঙ্গে তর্কে ক্ষান্ত দিলেন। তর্কে বাবা কোথায় মার কাছে পেরে উঠবেন ?