পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RRa १२छ् পরদিন সকালবেলায় নীল-লোহিত যথাসময়ে স্কুলে গিয়ে হাজির হলেন। গিয়ে দেখেন যে, মেয়েটি আগেই এসে যথাস্থানে একটি মাদুরের উপরে যোগাসনে বসে আছে, আর তার কালো কালো চোখ দুটি কি যেন খুঁজছে; তঁাকে দেখবামাত্রই সে চোখ নিবাতনিষ্কম্প প্ৰদীপের মত হয়ে গেল । নীল-লোহিত অমনি তঁর শ্লেট নিয়ে বড় বড় অক্ষরে ক খ লিখতে বসে গেলেন। তাঁর সঙ্গে মেয়েটির যা কিছু কথাবার্তা হল সে শুধু চােখে চােখে, মুখের ভাষায় নয়। চোখের আলাপ যখন খুব জমে উঠেছে, তখন হঠাৎ একটা বন্দুকের বেজায় আওয়াজ হল ; আমনি ছাত্রীরা সব চমকে উঠে ভয়ে হাঁউ মউ করতে আরম্ভ করলে, আর সেই মেয়েটি নীল-লোহিতের দিকে সকাতরে চেয়ে রইল। সে চাহনির ভাবটা এই যে, গুলির হাত থেকে আমাকে যদি কেউ রক্ষা করতে পারে ত সে তুমি। এই সময়ে নীল-লোহিতের চােখে পড়ল যে, দরুমার বেড়া ফুটো করে একটা গোলাপী রংয়ের গুলি সোজা মেয়েটির দিকে ছুটে আসছে। নীল-লোহিত আর তিলমাত্র দ্বিধা না করে, বা হাত দিয়ে শ্লেটখানি মেয়েটির মুখের সুমুখে ধরলেন আর গুলিটি শ্লেট ভেদ করে বেরবামাত্র ডান হাত দিয়ে সেটি চেপে ধরলেন। তখন সে গুলির তেজ কমে এসেছে, তাই সেটি নীল-লোহিতের মুঠোর মধ্যে রয়ে গেল। ইতিমধ্যে বেড়ায় আগুন ধরে গিয়েছে, মেয়েরা সব ডুকরে কঁদতে আরম্ভ করেছে, আর বাইরে লোকে লোকারণ্য হয়ে গিয়েছে। এমন সময় নীল-লোহিতের বাবা একটা দোনালা বন্দুক হাতে করে স্কুলে এসে উপস্থিত। তিনি এসেই প্ৰথমে আগুন নেবাবার ব্যবস্থা করলেন, এবং পরে ব্যাপার কি হয়েছিল তা গৃহস্বামীকে বললেন। নীললোহিতের বাবার অভ্যাস ছিল বাড়ীর সুমুখে পুকুরে একটা ছিপি-আঁটা বোতল ভাসিয়ে দিয়ে সেই বোতলকে গুলি মারা-চোখের নিশানা ও হাতের তাক ঠিক রাখবার জন্য। সেদিন গুলিটে বোতলের গা থেকে ঠিকরে বেঁকে বিপথে চলে এসেছে। অবশ্য পথিমধ্যে তার তেজ