পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RRS গল্পসংগ্ৰহ তিনি তঁর আত্মীয় ও পরমহিতৈষী জনৈক বড় জমিদারের কাছে এক্ষেত্রে কিংকর্তব্য, সে সম্বন্ধে পরামর্শ নিতে গেলেন। তিনি যে পরামর্শ দিলেন, তা অমূল্য। কেননা, তিনি ছিলেন একজন যেমন হুসিয়ার, তেমনি জবরদস্ত জমিদার। তারপর জমিদার মহাশয় ছিলেন অতি স্বল্পভাষী লােক। তাই তাঁর আদ্যোপান্ত উপদেশ এখানে উদ্ধৃত করে দিতে পারছি। জমিদারী শাসন-সংরক্ষণ সম্বন্ধে তীর মতামত, আমার বিশ্বাস, অনেকেরই কাজে লাগবে। তিনি বললেন—“দেখি বাবাজী, যে পৈতৃক সম্পত্তির আয় ছিল শালিয়ানা দু’লক্ষ টাকা, আমার হাতে তা এখন চার লক্ষে এসে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং আমি যে জমিদারীর উন্নতি করতে জানি, এ কথা আমার শত্রুরাও স্বীকার করে ;-আর দেশে আমার শক্রিরও অভাব নেই। জমিদারী করার অর্থ কি জান ? জমিদারীর কারবার জমি নিয়ে নয়, মানুষ নিয়ে। ও হচ্ছে একরকম ঘোড়ায় চড়া। লোকে যদি বোঝে যে, পিঠে সোয়ার চড়েছে, তাহলে তাকে আর ফেলবার চেষ্টা করে না। প্ৰজা হচ্ছে জমিদারীর পিঠ, আর আমলা-ফয়লা তার মুখ। তাই বলছি, প্ৰজাকে সায়েস্তা রাখতে হবে খালি পায়ের চাপে ; কিন্তু চাবুক চালিয়ে না, তাহলেই সে পুস্তক ঝাড়বে আর অমনি তুমি ডিগবাজি খাবে। অপরপক্ষে আমলাদের বাগে রেখে রািশ কড়া করে ধর, কিন্তু সে রাশ প্ৰাণপণে টেনে না, তাহলেই তারা শির-পা করবে। আর অমনি তুমি উল্টে ডিগবাজি খাবে। এক কথায় তোমাকে একটু রাশভারি হতে হবে, আর একটু কড়া হতে হবে। বাবাজী, এ ত ওকালতি নয় যে, হাকিমের সুমুখে যত নুইয়ে পড়বে নেতিয়ে পড়বে, আর যত তার মনযোগান কথা কইবে, তত তোমার পসার বাড়বে। ওকালতি করার ও জমিদারী করার কায়দা ঠিক উল্টো উল্টো।” এ কথা শুনে চাটুয্যে সাহেব আশ্বস্ত হলেন ; মনে মনে ভাবলেন যে, যখন তিনি ওকালতিতে ফেল করেছেন, তখন তিনি নিশ্চয়ই জমিদারীতে পাশ করবেন। কিন্তু তীর মনের ভিতর একটু ধোকাও রয়ে গেল। তিনি জানতেন যে, তার পক্ষে রাশভারি হওয়া অসম্ভব।