পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&ቅbr 5is Fr5f2 মুস্কিল হল কিন্তু প্ৰাণবন্ধু দাসের। এ ব্যক্তি ছিল এ কাছারির সবচেয়ে পুরাণো আমলা। পয়তাল্লিশ বৎসর বয়সের মধ্যে বিশ বৎসর কাল সে এই ষ্টেট একই পোষ্টে একই মাইনেতে বরাবর কাজ করে এসেছে। এতদিন যে তার চাকরি বজায় ছিল, তার কারণ-সে ছিল অতি সৎ লোক, চুরি-চামারির দিক দিয়েও সে ঘেঁসত না। আর তার মাইনে যে কখনও বাড়ে নি, তার কারণ সে ছিল কাজে অতি ঢ়িলে। প্রাণবন্ধু কাজ ভালবাসত না, পৃথিবীতে ভালবাসত। শুধু দুটি জিনিস ; -এক তার স্ত্রী, আর এক তামাক । এই ঐকান্তিক ভালবাসার প্ৰসাদে তার শরীরে দুটি অসাধারণ গুণ জন্মেছিল। বহুদিনের সাধনার ফলে তার হাতের লেখা হয়েছিল যেরকম চমৎকার, তার সাজা তামােকও হত তেমনি চমৎকার। আপিসে এসে তার নিত্যনিয়মিত কাজ ছিল-সৰ্বপ্রথমে তার স্ত্রীকে একখানি চিঠি লেখা। গোড়ায় “প্রিয়ে, প্ৰিয়তরে, প্ৰিয়তম৷” এই সম্বোধন এবং শেষে “তোমারই প্রাণবন্ধু দাস” এই দ্ব্যর্থসূঢ়ক স্বাক্ষরের ভিতর, প্রতিদিন ধীরে সুস্তিরে ধরে ধরে পূরো চার পৃষ্ঠা চিঠি লিখতে লিখতে তার হাতের অক্ষর ছাপার অক্ষরের মত হয়ে উঠেছিল। এই জন্য আপিসের ষত দলিলপত্র তাকেই লিখতে দেওয়া হত । এই অক্ষরের প্রসাদেই তার চাকরির পরমায়ু অক্ষয় হয়েছিল। তারপর প্রাণবন্ধু ঘণ্টায় ঘণ্টায় তামাক খেতি-অবশ্য নিজ হাতে সেজে। পরের হাতে সাজা-তামাক খাওয়া তার পক্ষে তেমনি অসম্ভব। ছিল-পরের হাতের লেখা-চিঠি তার স্ত্রীকে পাঠান। তার পক্ষে যেমন অসম্ভব ছিল। সে কন্ধেয় প্রথমে বেশ করে ঠিকরে দিয়ে তার উপর তামাক এলো করে সেজে তার উপর আলাগোছে মাটির তাওয়া বসিয়ে, তার উপর আড় করে স্তরে স্তরে টাকে সাজিয়ে, তার পর সে টকের মুখাগ্নি করে হাতপাখা দিয়ে আস্তে আস্তে বাতাস করে ধীরে ধীরে তামাক ধরাত। আধঘণ্টা তদ্বিরের কম যে আর ধোঁয়া গোল হয়ে, নিটােল হয়ে, মোলায়েম হয়ে, নলের মুখ দিয়ে অনর্গল বেরোয় না, এ কথা যারা কখনো হুকো টেনেছে, তাদের মধ্যে কে না জানে ?