পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R8 R গল্পসংগ্ৰহ মধ্যে আর দ্বিতীয় ছিল না। উপরন্তু তার বাপ রেখে গিয়েছিলেন যথেষ্ট পয়সা। আমার যদি কোন ভগ্নী থাকত, তা হলে সরোজকে আমার ভগ্নীপতি করবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতুম। বিধাতা তাকে আদর্শ জামাই করে গড়েছিলেন। আমি যা মনে ভেবেছিলুম, হলেও তাই। সরোজ তার স্ত্রীকে অতি সুখে রেখেছিল। আদর-যত্ন অন্ন-বস্ত্রর অভাব লতিকা একদিনের জন্যও বোধ করেনি। এক কথায় আদর্শ স্বামীর শরীরে যে-সব গুণ থাকা দরকার, সরোজের শরীরে সে-সবই ছিল। দাম্পত্যজীবন যতদূর মসৃণ ও যতদূর নিষ্কণ্টক হতে পারে, এ দম্পতির তা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বিবাহের দশ বৎসর পরেই লতিকা বিধবা হল। সরোজ উত্তর-পশ্চিম প্রদেশে সরকারী চাকরি করত । অল্পদিনের মধ্যেই চাকরিতে সে খুব উন্নতি করেছিল। ইংরেজী সে নিখুঁতভাবে লিখতে পারত, তার হাতের ইংরেজীর ভিতর একটিও বানান ভুল থাকত না, একটিও আর্ষ প্রয়োগ থাকত না। এক হিসেবে তার ইংরেজী কলমষ্ট ছিল তার উন্নতির মূল। যদি সে বেঁচে থাকত, তাহলে এতদিনে সে বড় কর্তাদের দলে দুকে যেত। বুদ্ধবিদ্যার সঙ্গে যার দেহে অসাধারণ পরিশ্রমশক্তি থাকে, সে যাতে হাত দেবে, তাতেই কৃতকাৰ্য হতে বাধ্য। লতিকা একটি আট বছরের ছেলে নিয়ে দেশে ফিরে এল। এর পর থেকেই তার অন্তরে যত স্নেহ ছিল, সব গিয়ে পড়ল তার ঐ একমাত্র সন্তানের উপর। ঐ ছেলে হল তার ধ্যান ও জ্ঞান। ঐ ছেলেটিকে মানুষ করে তোলাই হল তার জীবনের ব্ৰত। এ পর্যন্ত যা বললুম, তার ভিতর কিছুই নূতনত্ব নেই। এ দেশে, এবং আমার বিশ্বাস অপর দেশেও, বহু মায়ের ও অবস্থায় একই মনোভাব হয়ে থাকে। তবে লতিকা তার ছেলেকে শুধু মানুষ করে তুলতে চায় না, চায় অতি-মানুষ করতে। আর এ অতি-মানুষের আদর্শ কে জান ? শ্ৰীসুরিনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ওরফে আমি ! এ কথা শুনে হেস না । সে তার ছেলেকে পান-তামাক খেতে শেখাতে চায় না, সেই শিক্ষা দিতে চায় যাতে সে আমার মত সাহিত্যিক হয়ে উঠতে