পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R6:V» গল্পসংগ্ৰহ ঘটনাটি আমরা পাঁচজন একরকম ভুলেই গিয়েছিলুম। কারণ, সংসারের নিয়মই এই যে, পৃথিবীর পুৱান ঘটনা সব ঢাকা পড়ে নব নদী ঘটনার জালে, আর আদালতে নিত্য নব ঘটনার কথা শোনা যায়। উক্ত ঘটনার বছর পাঁচেক পরে আমার বন্ধুটি একদিন বার-লাইব্রেরীতে এসে আমার হাতে একখানি চিঠি দিয়ে বললেন যে, এখানি মন দিয়ে পড়, কিন্তু এ বিষয়ে কাউকে কিছু বলে না। সে দিন আমার বন্ধুর মুখের চেহারা দেখে বুঝতে পারলুম না যে, তার মনের ভিতর কি ভাপ বিরাজ করছে—আনন্দ না মর্মান্তিক দুঃখ ? শুধু এইটুকু লক্ষ্য করলুম যে, একটা ভয়ের চেহারা তঁর মুখে ফুটে উঠেছে। চিঠির দিকে তাকিয়ে প্রথমে নজরে পড়ল যে, তার উপরে কোনও ডাকঘরের চাপ নেই। তাই মনে হয়েছিল যে, এখানি কোনও স্ত্রীলোকের চিঠি-য়ে চিঠি সে। তঁকে দেবার সুযোগ অথবা সাহস পায়নি। এরকম সন্দেত হবার প্রধান কারণ এই যে, আমার বন্ধু আমাকে এ পত্রের বিষয়ে নীরব থাকতে অনুরোধ করেছিলেন। তারপর যখন লক্ষ্য করলুম যে, শিরোনামা অতি সুন্দর, পরিষ্কার ও পাকা ইংরাজী অক্ষরে লেখা, তখন সে বিষয়ে আমার মনে আর কোনও সন্দেহ রইল না। আমি লাইব্রেরীর একটি নিভৃত কোণে একখানি চেয়ারে বসে সেখানি এইভাবে পড়তে সুরু করলুম-যেন সেখানি কোনও brief-এর অংশ। ফলে কেউ আর আমার ঘাড়ের উপর বুকে সেটি দেখবার চেষ্টা করলে না। উকিল-সমাজের একটা নীতি অথবা রীতি আছে, যা সকলেই মান্য করে। সকলেই পরের ব্রিফকে পরস্ত্রীর মত দেখে, অর্থাৎ কেহই প্রকাশ্যে তার দিকে নজর দেয় না। সে চিঠিখানি নেহাৎ বড় নয়, তাই সেখানি এতদিন পরে প্রকাশ করছি। পড়ে দেখলেই ব্যাপার কি বুঝতে পারবেন। শ্ৰদ্ধাস্পদেষু, দেশ থেকে যখন চিরকালের জন্য বিদায় নিয়ে আসি, তখন নানারকম দুঃখে আমার মন অভিভূত হয়ে পড়েছিল, তার ভিতর একটি প্রধান দুঃখ