পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পসংগ্ৰহ و ۹ লোকটি একাধারে কুকুরের নর্স এবং ডাক্তার। কুকুরজাতির ঔষধ-পথ্য সব তার নখগ্রে। কুকুরের খানাকে যে রাতিব বলে, আর তা যে রাঁধতে হয় বিনা নুন ঝালে আর শুধু হলুদ দিয়ে—একথা আমরা প্রথম শুনলুম তার মুখে। কুকুরের জন্য খানা পাকাবার হিসেব এই যে, তাতে কঁাচা মাংসের রূপ-গুণ সব বজায় থাকবে। আমাদের যেমন কুইনিন ও রেড়ীর তৈল, কুকুরদেরও নাকি হিং রািশুন তেমনি সর্বরোগের মহৌষধ। বাবা তার পশ্বায়ুর্বোেদ পণ্ডিত্য দেখে চমৎকৃত হয়ে গেলেন, আর আমরাও ভারী খুসি হলুম, কিন্তু সে অন্য কারণে। সে কারণ যে কি, তা পরে বলছি। আর ভাইদের মধ্যে আমিই হয়ে পড়লুম তার মহাভক্ত, যদিচ কুকুর জানোয়ারটির সঙ্গে আমার কোনরূপ ঘনিষ্ঠত ছিল না; এবং তাদের ধর্মকর্ম সম্বন্ধে আমি সম্পূর্ণ উদাসীন ছিলুম। দাদা বলতেন, তিনি কুকুরের হাড়হদ জানেন, তাই দাদার মুখে শুনে শিখেছিলুম যে, যে কুকুরের বিশটি নখ থাকে তার নখে বিষ থাকে। কুকুর সম্বন্ধে আমার এটুকুমাত্র জ্ঞান ছিল। এখন বুঝি, দাদার এ জ্ঞান র্তার ষত্বণত্ব-জ্ঞানের অভাবের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। সে যাই হোক, কুকুরের প্রতি আমার যে পরিমাণ অগ্ৰীতি ছিল, তার রক্ষকের প্রতি আমার সেই পরিমাণ গ্ৰীতি জন্মাল । (? এ লোকটির নাম ছিল বীরবল। বাবা ছিলেন সেকালে হিন্দু কলেজের ছেলে, ক্যাপ্টেন রিচার্ডসনের শিষ্য, অতএব মহা সাহিত্যভক্ত ; তাই ছেলেবেলায় আমাদের বাড়ীতে বহু নামী লোকের সমাগম হত, কিন্তু এদের একজনেরও চেহারা আমার মনে নেই। মনে আছে একমাত্র বীরবলের। এর কারণ এরা অসামান্য ছিলেন গুণে, রূপে নয়। অপরপক্ষে বীরবল ছিল রূপে-গুণে অনুপম। অবশ্য সেই সব গুণে, যেসব গুণ ছোট ছেলেরা বুঝতে পারে। সে ছিল যেমন বলিষ্ঠ, তেমনই নিৰ্ভীক। ঘোড়ার বাগডোর সে একটানে ছিড়ে