পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অবনীভূষণের সাধনা ও সিদ্ধি y কলেজে আমার সহপাঠীদের মধ্যে অবনীভূষণ রায় ছিলেন আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু; অর্থাৎ আমি ছিলেম তীর একান্ত অনুরক্ত ভক্ত। প্রথম যৌবনে পাঁচজনের মধ্যে একজন সমবয়স্ক যুবক যে কেন আমাদের অত্যন্ত প্রিয় হয়ে ওঠে, তা বলা কঠিন। কারণ অনুরাগ কিম্বা ভক্তির ভিতর একটা অজানা জিনিস আছে । আমরা সে অনুরাগ বা ভক্তির যখন কারণ নির্দেশ করতে চাই, তখন আমরা সেই সব কথাই ব্যক্তি করি। যা আর পাঁচজনের কাছে প্ৰত্যক্ষ । কিন্তু আমার বিশ্বাস-অন্তত অনুরাগের মূলে এমন একটা অনির্দিষ্ট কারণ থাকে, যা ঠিক ধরাছোঁয়ার বস্তু নয়; অতএব তা অপরকে চােখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েও দেওয়া যায় না। অবশ্য অবনীভূষণের শরীরে এমন কটি স্পষ্ট গুণ ছিল, যা কারও চোখ এড়িয়ে যেত না। প্রথমত, অবনীভূষণ ছিলেন অতিশয় প্রিয়দর্শন, উপরন্তু তিনি ছিলেন অতিশয় ভদ্র। বনেদি ঘরের ছেলের দেহে ও চরিত্রে যে-সব গুণের সপ্তাৰ আমরা কল্পনা করি, অবনীভূষণের দেহে ও মনে সে গুণই পূৰ্ণমাত্রায় ছিল। তার তুল্য ধীর ও অমায়িক যুবক আমাদের মধ্যে আর দ্বিতীয় ছিল না। আর ধনীর সন্তানের চরিত্রে যে-সব ছার গুণের নিত্য সাক্ষাৎ পাওয়া যায়-যথা মুখোচিত দাম্ভিকতা, সর্বজ্ঞতা, অনবস্থচিত্তত, স্বেচ্ছাচারিতা প্রভৃতি-- সে সবের লেশমাত্রও তঁাকে স্পর্শ করেনি, যদিচ অবনী ছিলেন একাধারে বনেদি বংশের ও বড়মানুষের ছেলে-রায়নগরের বড় জমিদার লক্ষীকান্ত রায়ের একমাত্র সন্তান। সেকালে কলেজে আমরা প্ৰায় সকলেই ছিলাম রোমান্টিক প্রকৃতির যুবক। একমাত্র অবনীভূখণের মনে romanticism-এর ছাপ। কখনও পড়েনি, ছোপিও ধরেনি । স্ত্রীজাতি সম্বন্ধে তীর কোনরূপ কৌতুহল, কোনরূপ মায়া ছিল না ;