পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዩጋ88 গল্পসংগ্ৰহ কৃতসংকল্প হয়েছ, তখন তাই করাই তোমার কর্তব্য। কর্তব্য পালন করার ভিতর কোন সুখ নেই। কিন্তু সুখ নেই বলেই কর্তব্যসাধন হচ্ছে নিজের ক্ষুদ্র অহং-এর বন্ধন থেকে লৌকিক মুক্তির সহজ উপায়। কারণ মানুষের লৌকিক কর্তব্যগুলি তার মনের সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়; সে সীমা অতিক্রম করলেই মানুষের মন অসীমের মধ্যে দিশেহারা হয়ে পড়ে, আর তখন তার কর্মজীবন ব্যর্থ হয়।” “লৌকিক মুক্তি”-র অর্থ কি জিজ্ঞাসা করায়, প্যারীলাল বলেছিলেন যে, “এ যুগে যুগ্মধর্ম অনুসারে সবিকার সমাজব্রহ্মে লীন হওয়াই পরম পুরুষাৰ্থ-নির্বিকার পরব্রহ্মে নয়।” প্যারীলালের কথাটা কতটা সত্য আর কতটা রসিকতা তা না বুঝলেও, স্ত্ৰৈণ হওয়াটাই যে পরম পুরুষাৰ্থ নয়, এ কথাটা অবনীভূষণ হৃদয়ঙ্গম করলেন, এবং তঁর প্রতিষ্ঠিত স্কুল ও ডাক্তারখানার উন্নতিসাধন করাই যে তঁর মুখ্য কর্তব্য, সে বিষয়ে নিঃসন্দেহ হলেন । W এর পর অবনীভূষণ আবার তাঁর স্কুল ও ডাক্তারখানার মাজাঘসার কাজে পুরোদমে লেগে গেলেন। নূতনত্বের মধ্যে এই হল যে, তিনি র্তার স্ত্রীকে যে সব বিষয় শিক্ষা দিতেন, সেই সব বিষয়ে স্কুলে শিক্ষকতা করতে আরম্ভ করলেন। কিন্তু কিছুদিনে আবার আবিষ্কার করলেন যে, এ কর্তব্যপালনে তঁর সুখও নেই, সন্তোষও নেই, সম্ভবত সার্থকতাও নেই। তঁর স্ত্রী যেরকম একাগ্ৰমনে তঁর কাছে পাচরকম লেখাপড়া শিখতেন, স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে একজনেরও সে মন নেই, সে আগ্রহ নেই। ক্রমে তঁর জ্ঞান হল যে, তিনিও যেমন শিক্ষাদান করা শুধু একটা অপ্ৰিয় কর্তব্য হিসেবে ধরে নিয়েছেন, ছেলেরা শিক্ষালাভটাও তেমনি একটি অপ্রিয় কর্তব্য হিসেবে গ্রাহ করে নিয়েছে। তাদের শিক্ষা সম্বন্ধে কোন মনের টান নেই। ফলে তঁর পক্ষে শিক্ষাদান করাটাও যেমন নিরানন্দ ব্যাপার, ছেলেদের পক্ষে শিক্ষালাভ করাটাও তেমনি নিরানন্দ ব্যাপার, এবং সেই সঙ্গে তঁর মনে