পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অবনীভূষণের সাধনা ও সিদ্ধি { হল যে, প্যারীলাল যে শিক্ষকতার পেশা ছেড়ে দিয়েছেন, তার কারণ বোধ হয়। তিনি যেদিন বুঝলেন ও-জাতীয় শিক্ষার ভিতর কোন আনন্দ নেই, না মাস্টারদের না ছাত্রদের, সেদিন থেকে এ ব্যাপারের দিকে পিঠি ফিরিয়েছেন। ছাত্রদের মনে যদি তার স্ত্রীর মত শিক্ষালাভের জন্য আকুলত থাকত, তাহলে শিক্ষা দেবার একটা সার্থকতা থাকত। এর থেকে তঁর মনে হল যে, শিক্ষা যথার্থ নিতে পারে মেয়ের, আর দিতে পারে পুরুষে। এর পর তিনি নিশ্চয়ই একটি Girls' school প্রতিষ্ঠা করতেন, যদি না তঁর মনে পড়ে যেত যে, প্যারীলাল বলেছিলেন সব মেয়ে তঁর স্ত্রীর প্রকৃতির নয় ;-অনেকে বরং তার উল্টো প্রকৃতির। c অবনীভূষণ ক্রমে এ বিষয়ে নিঃসন্দেহ হলেন যে, স্কুল-মাস্টার করার ভিতর অপরের কোন সার্থকতা থাকতে পারে, কিন্তু তার নেই। সুতরাং স্কুল তাঁর সমানভাবেই চলতে লাগল, শুধু তিনি শিক্ষকতা থেকে অবসর নিলেন। এ কাজ তিনি অনায়াসেই করতে পারলেন, কারণ তিনি ছিলেন তঁর স্কুলের একটি অবৈতনিক এবং উপরি মাস্টার। আর সঙ্গে সঙ্গে তার হাসপাতালের মোহও কেটে গেল। ও প্ৰতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের ফলে দুটি বিষয় সম্বন্ধে তার জ্ঞানলাভ হল—এক রোগ আর দ্বিতীয় মৃত্যু। মানুষের রোগযন্ত্রণ। আর তারপর মৃত্যু তাঁর মনকে নিতান্ত অভিভূত করে ফেলল। বিশেষত তাঁর স্কুলের সব চেয়ে ভাল ছেলে শ্ৰীশঙ্কর যখন বসন্তােরাগে অশেষ যন্ত্রণা ভোগ করে অবশেষে মারা গেল, তখন তঁর মন ঘোর বিষাদে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। র্তার মনে হল, তার স্ত্রীও একদিন হয়ত ঐ ভাবে অকস্মাৎ মারা যেতে পারে। একথা মনে উদয় হবামাত্র তার কাছে পৃথিবীটা একটা মহাশ্মশানে পরিণত হল, যার নীঢ়ে শুধু চাই আর উপরে ধোঁয়। পৃথিবীতে মৃত্যু আছে জেনেও মামুৰে যে কি করে হেসে-খেলে কাজকর্ম করে বেড়ায়, এ ব্যাপারটা তাঁর কাছে বড়ই অদ্ভুত মনে হল। প্যারীলাল হয়ত তীর জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা