পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অবনীভূষণের সাধনা ও সিদ্ধি Sፅ » ዔ নয়, বিলাসের নেশা তাকে সহজেই পেয়ে বসে; যেমন যে লোক মদ্যপানে অভ্যস্ত নয়, এক গেলাসই তার মাথায় চড়ে যায়, আর তখন দ্বিতীয় গেলাসের পিপাসা তার অদম্য হয়ে ওঠে। এ সত্ত্বেও তিনি এ নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে বাধ্য হলেন, কেননা কামদাপ্রসাদ তার স্বসম্প্রদায়ের লোক, উপরন্তু আত্মীয়। ܘܶ এই বিবাহবাসরে বিখ্যাত বাইজি বেনজীরের মুখে একটি মঙ্গলারের ঠুংরি শুনে তিনি মুগ্ধ হয়ে গেলেন। তার গানের মৃদু টান ও সূক্ষ্য তানগুলি তঁর হৃদয়কে স্পর্শ করে তার একটি রুদ্ধ দ্বার খুলে দিলে, এবং সেই সঙ্গে একটি আনন্দময় জগৎ তীর মনের দেশে আদিভূত হল। র্তার মনে হল যে, প্যারীলালের হাতে পড়লে সেতারের যে-সৰ্প অতিকোমল মীড় প্রাণকে স্পর্শ করত, বেনজীরের গলায় তদনুরূপ সূক্ষা মীড় সব অধিষ্ঠান করেছে। প্যারীলাল বলতেন যে—“সঙ্গীতের স্থূলদেহ আমাদের শ্রবণেন্দ্ৰিয়াকে স্পর্শ করে, আর তার সূক্ষ্যশরীরষ্ট আমাদের মর্ম স্পর্শ করে। তাই সঙ্গীত যখন আমাদের কাণের কাছে মুমূর্ষু হয়, তখন তা আমাদের প্রাণের কাছে জীবন্ত হয়ে ওঠে। কারণ পৃথিবীতে যা ব্যক্তি, তা ইন্দ্ৰিয়ের বিষয়, যা অব্যক্ত তা মনের বিষয়, আর যা অধ্যব্যক্তি তা যুগপৎ ইন্দ্ৰিয় ও মনের অর্থাৎ প্রাণের বিষয়। অবনীভূষণ মনে মনে স্বীকার করলেন যে, পারলালের কথা সত্য। কিন্তু প্যারীলালের সেতার ত তাঁর মনকে কখন এভাবে স্পর্শ করেনি, কোন নূতন আকাঙ্ক্ষা উদ্রেক করেনি। এর কারণ বোধ হয় ट्रांक)ल মধ্যে এমন কোন রহস্য আছে, যা তারের যন্ত্রে নেষ্ট। সব স্ত্রীলোক যে এক প্রকৃতির জীব নয়, একথা তিনি পারলালের মুখে পূর্বেই শুনেছিলেন। এইবার স্পষ্ট অনুভব করলেন যে, স্ত্ৰীজাতির মোহিনীশক্তিও বিচিত্র এবং নানামুখী। বেনজীরও ছিল সুন্দর, কিন্তু তার রূপকে ফুটিয়ে তুলেছে তার আর্ট। অবনীভূষণের বিশ্বাস হল যে, আর্ট হচ্ছে সেই বস্তু, যা প্ৰকৃতির প্রচ্ছন্নরূপ প্রকাশ করে।