পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Wor १३छ् মনে হত, আমার দেহে যদি তোমার মন থাকত, তাহলে পৃথিবীর কোন নায়িকাই আমাকে দেখে স্থির থাকতে পারত না । এমন কি স্বয়ং ক্লিওপেট্রাও যদি আমাকে রাস্তায় দেখতে পেত, তাহলে সেও তার প্রাসাদশিখর থেকে নক্ষত্রের মত খসে এসে আমার বুকে সংলগ্ন হয়ে Star of Indiaর মত জ্বল জ্বল করত। কিন্তু আমার সেই যৌবনস্বপ্ন সাকার হয়েছে তােমার মধ্যম কুমার প্রফুল্লাপ্রসূন । তুমি যা সৃষ্টি করেছ, তা একখানি মহাকাব্য ; তোমার এ কুমার—নব কুমার-সম্ভব। আমি মনে করতুম, এ যুগে ও-রকম সৃষ্টি অসম্ভব। -দেখ আনন্দ, তোমার এ সব রসিকতা আজ ভাল লাগছে না! -আমি যে সব কথা বলছি, তার ভাষা ঈষৎ রসিকতা-ঘেঁসা হলেও, আসলে সত্য কথা ; প্ৰফুল্ল যে এক পদাঘাতে বিলেতি চামড়ার ফুটবল বিলেতি সাহেবদের মাথার উপর দিয়ে পাখীর মত উড়িয়ে দেয়, এ কথা কে না জানে ? তারপর ইউনিভারসিটির ভিতর যতগুলি বেড়া আছে, সবগুলোই সে টপ টপ করে ডিঙ্গিয়ে গেল। এগজামিনেশনের এতাদৃশ hurdle jump বাঙলার কটি ফুটবল-খেলিয়ে করতে পারে ? শুধু তাই নয়, সে কবিতাও লেখে চমৎকার। সেদিন কল্লোল, কি কালিকলম, কি বেণু, কি বীণা, এই রকম একটা কাগজে প্রফুল্লর লেখা “আকাঙ্ক্ষা-প্রসূন” বলে একটি কবিতা পড়লুম। --তুমি ওসব ছাইপােশও পড় নাকি ? -পড়তে বাধ্য হই। থাকি পাড়াগাঁয়ে, করি জমিদারী, হাতে কােজ নেই, আছে সময়। সেই সময় কাটাবার জন্যে ছেলেরা যত বই কেনে, কিন্তু পড়ে না, সে সবই আমি পড়ি ; নচেৎ টাকাগুলো যে মাঠে মারা যায়। দেখ, এই সূত্রে আমি একটা জিনিস আবিষ্কার করেছি। এ যুগে ইংরেজীতে যারা বই লেখে, তারা একজনও ইংরেজ নয়; সব নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যাণ্ড ও আইসল্যাণ্ডের লোক, আর সবাই জাতে বছি, তাদের সবারই উপাধি সেন। যথা-ইবসেন, হামসেন, বিয়র্ণসেন ইত্যাদি। সে যাই হোক, তোমার ছেলের সে কবিতা পড়ে আমারও মনে আকাঙ্ক্ষার ফুল ফুটে উঠল। এ ফুলের স্পষ্ট কোনও রূপ নেই,