পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পুতুলের বিবাহ-বিভ্ৰাট 8s -হুজুৱ! শিখেছিল মামুলি ঢংয়ের বাজনা ; কিন্তু বাজাত নিজের ঢংয়ে। সে চাইত সব জিনিসেরই সংস্কার করতে। কিন্তু সে সংস্কার ও বিকারের প্রভেদ বুঝত না। ফলে সঙ্গীতে-শিব গড়তে সে বঁােদর গড়ত। —আর তুই এ সব গােঁয়ার্ডমির প্রশ্রয় দিয়েছিল ? --দিয়েছি। কেন না তর্কে তাকে পরাস্ত করতে পারিনি। সে তর্ক ঘোর দার্শনিক, উপরন্তু ইংরেজী ভাষায়। আর স্বাধীনতা-ভক্ত বলে সে রাগরাগিণীর অসবর্ণ বিবাহের ছিল একনিষ্ঠ ঘটক। —তুই মাস্টার হয়ে ছাত্রের কাছে তর্কে হেরে গেলি ? -হুজুর ! আমি ত কোন ছার! ইংরেজ-রাজ যদি তার সঙ্গে তর্কযুদ্ধে প্ৰবৃত্ত হতেন, তাহলে হেরে এ দেশ থেকে নিশ্চয়ই পালাতেন--আর পিঠপিঠ ভারত স্বাধীন হয়ে উঠত। সে কোন কিছুরই ভেদাভেদ মানত না। তার কাছে গানমাত্ৰেই খেয়াল। -আচ্ছ, তাহলে খেয়াল ত সে গ্রাহ করত ? --না। হুজুর ; আমরা যাকে খেয়াল বলি, তা শুনলে সে কানে হাত দিত। ও ঢংয়ের গানের নাকি গা নেই, আছে শুধু গহনা। খেয়াল মানে নাকি খামখেয়াল-তার নিজের খেয়াল ! —এ বুদ্ধি তার হল কোথেকে ? —তার মার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিল। গিন্নী ছিলেন মূর্তিমতী খেয়াল। র্তার নিত্যনতুন খেয়ালের ধাক্কায় ও পরিবার ওলট-পালট হয়ে গিয়েছিল। আর আমাদের মত পাঁচজন আশ্রিত লোকদের কপালে জুটত, “ক্ষণে হাতে দড়ি, ক্ষণেকে চাঁদ।” —তোর কপালে কি জুটেছিল ? --হুজুর, চাঁদ ! -বাড়ীর কর্তা কি নাকে সরষের তেল দিয়ে ঘুমাতেন! -করবেন কি ? গিামীর খেয়াল মেটাতে টাকা চাই, দিতে হবে। “আসবে কোথেকে ? ধার কর না। শুধবে কে ? লবডঙ্কা ।” এই ছিল সে পরিবারের নিয়ম।