পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

སྨན་རྩེ་ 88ቕ আমি তাকে বললুম, “আজ তোমাকে এক হাত খেলা দেখাতে হবে ।” লোকটা অতি ধীরভাবে উত্তর করলে, “হুজুর, লেঠেলি আমার জাতব্যবসা নয়। বাপ-ঠাকুরদার মত আমিও খেয়ার নৌকো পারাপার করেই দু’পয়সা কামাই। আমার কােজ লাঠি খেলা নয়, লাগি ঠেল। তাই বলছি, হুজুর, এ আদেশ আমাকে করবেন না।” আমি জিজ্ঞেস করলুম, “তাহলে তুমি লাঠি খেলতে জান না ?” ( R ) সে উত্তর করলে, “হুজুর, জানতুম ছোকরা বয়েসে, তারপর আজ বিশ-পাঁচিশ বছর লাঠিও ধরিনি, লাকড়িও ধরিনি, সড়কিও ধরিনি; তা ছাড়া আর একটা কথা আছে। এদের কাছে আমি ঠাকুরের সুমুখে দিব্যি করেছি যে আমি আর লাঠি সড়কি ছোব না। সে কথা ভাঙি কি করে ? হুজুরের হুকুম হলে আমি না বলতে পারিনে ; কিন্তু হুজুর যদি আমার কথাটা শোনেন, তবে হুজুর আমাকে আর এ আদেশ করবেন না ।” আমি জিজ্ঞেস করলুম, “কেন এরকম দিব্যি করেছিলে ?” ঈশ্বর বললে, “ছেলেবেলায় এরা সব খেলা শিখত। আমিও খেলার লোভে এদের দলে জুটে গিয়েছিলুম। আমার বয়েস যখন বছর কুড়িক, তখন কি লাঠি, কি লক্ড়ি, কি সড়কিতে আমিই হয়ে উঠলুম। সকলের সেরা । এরা ভাবলে যে আমি কোনও মন্তর-তন্তর শিখেছি।--তারি গুণে আমি সকলকে হঠিয়ে দিই। হুজুর, মন্তর-তন্তর কিছুই জানিনে ; তবে আমার যা ছিল, তা এদের কারও ছিল না। সে জিনিস হচ্ছে চোখ। আমি অন্যের চােখের ঘোরাফেরা দেখেই বুঝতুমি যে তার হাতের লাঠি-সড়কির মার কোন দিক থেকে আসবে। কিন্তু আমার চোখ দেখে এরা কিছুই বুঝতে পারত না, আর শুধুমার খেত। শেষটায় এরা সকলে মিলে যুক্তি করলে যে আমাকে কালীবাড়ী নিয়ে গিয়ে হাড়কাঠে ফেলে বলি দেবে।