পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যখ শ্ৰীমান অলকচন্দ্ৰ গুপ্ত কল্যাণীয়েযু— যখ কাকে বলে, জান ? সংস্কৃতে যাকে বলত যক্ষ, তারই বাঙলা অপভ্রংশ হচ্ছে যখ। আমাদের মুখে যে শুধু যক্ষ যখ হয়ে গিয়েছে তাই নয় ;-তার রূপগুণও সব বদলে গিয়েছে। সংস্কৃতে যক্ষের রূপ কি ছিল আমি জানিনে। তবে এইমাত্র জানি যে, সে যুগে লোকে তাদের ভয় করত। কারণ তাদের শক্তি ছিল অসীম, অবশ্য মানুষের তুলনায়। আর যার শক্তি বেশি, তাকেই লোকে ভয় করে। যক্ষর ছিল মানুষ ও পশুর মাঝামাঝি এক শ্রেণীর অদ্ভুত জীব ; এক কথায়, তারা ছিল অর্ধেক মানুষ অর্ধেক পশু । তাদের একটি গুণের কথা সকলেই জানে। তারা ছিল সব ধনরক্ষক। তাই যক্ষের ধন কথাটা এদেশে মুখে মুখে চলে গিয়েছে। বাঙলাদেশে যক্ষ জন্মায় না। তাই যখ লোকে বানায়-ধানের রক্ষক হিসেবে। ধন সকলেই অর্জন করতে চায়, কিন্তু কেউ কেউ অর্জিত ধন রক্ষা করতে চায় চিরদিনের জন্য ; এক কথায়, ধনকে অক্ষয় করতে চায়। মানুষ চিরকালের জন্য দেহকেও রক্ষা করতে পারে না, ধনকেও নয়। যা অসম্ভব তাকে সম্ভব করাই হচ্ছে বাঙলায় যখস্মৃষ্টির উদ্দেশ্য। এ দেশের কোটিপতিরা কি উপায়ে যখ সৃষ্টি করতেন জান ? তঁরা সোনার মোহর ভর্তি বড় বড় তামার ঘড়া আর সেই সঙ্গে । একটি ব্ৰাহ্মণ বালককেও একটি লোহার কুঠরিতে বন্ধ করে দিতেন। বালক বেচারা যখন না খেতে পেয়ে মরে যেত, তখন সে যখ হত। আর কোটিপতির সঞ্চিত ধন রক্ষা করত। ধন আজও লোকে রক্ষা করে। শুনতে পাই Bank of France-এ কোটি কোটি মোহর মজুত রয়েছে,