পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 & R 外邵密 ইতিপূর্বে তীকে কখন দেখিনি, তীর নামও শুনিনি। আমাদের মনে হল, তঁর সঙ্গে কথাবার্তা কয়ে বঁচিব। কলকাতায় আমাদের কোন আত্মীয়স্বজনও ছিল না, কোন বন্ধুবান্ধবও ছিল না, যার সঙ্গে দুটাে কথা কয়ে সময় কাটান যায়। আর ইস্কুলে সহপাঠিদের সঙ্গে গল্প করেও চমৎকৃত হতুমি না, কারণ সেকালে কলকাতাই ছেলেদের । কথাবার্তার রস কলকাতার দুধের মতই ছিল-নেহাৎ জলে। সারদা দাদা রোজ সন্ধ্যেবেলায় আমাদের দেদার গল্প বলতেন ; জীবনে তিনি যা দেখেছেন, তারই গল্প। মা অবশ্য আমাদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে সারদা যা বলে তার ষোল আনাই মিথ্যে। কিন্তু তাতে আমরা ভড়কাইনি। কেননা মিথ্যা কথা আদালতে চলে না, কিন্তু গল্পে দিবারাত্র চলে। সে যাই হােক, সারদা দাদা বেশির ভাগ ভূতের গল্প বলতেন। তবে সে কথা আমরা মার কাছে ফাঁস করিনি। শুনেছি বাবার একজন প্রিয় তামাকওয়ালা দাদার কাছে নিত্য ভূতের গল্প বলত, ফলে দাদা নাকি রাত্তিরে এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যেতে ভয় পেতেন, তারপর বাবা তঁর প্রিয় তামাকওয়ালার আমাদের বাড়ী আসা বন্ধ করে দিলেন। পাছে মা সারদা দাদাকে বিদায় করে দেন, এই ভয়ে মার কাছে। এ গল্পসাহিত্যের আর পুনরাবৃত্তি করতুম না। তা ছাড়া কলকাতা সহরে ত ভূতের ভয় নেই। রাস্তায় আলো, পথের ধারে শুধু বাড়ীজঙ্গল নেই। ভূতেরা আলোকে ভয় করে, ও মানুষের চোঁচামেচিকে। কলকাতায় আলো যতটা না থাক, হল্লা দেদার আছে। অত হাঁটুগোলের মধ্যে ভূত আসে না। সারদা দাদা শুধু সেই সব ভূতের গল্প বলতেন, র্যাদের তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন। আমি তাকে একদিন জিজ্ঞেস করলুম-আপনি ত শুধু পাড়াগােঁয়ে ভূতের গল্প করেন, আপনি কি কখনও সাহেব ভৃত দেখেননি ? সারদা-দা উত্তর করলেন-দেখিব কোথেকে ? সাহেবরা ত আর এদেশে মরে না। না মরলে তারা ভূত হবে কি করে ? দেখ, ট্রেনে এত বড় বড় কলিসান হয়, যাতে হাজার হাজার দেশী লোক মরে; কিন্তু তাতে কোন সাহেব মরেছে, এমন কথা কি কখনও শুনেছ ?