পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

5-छेन्नैौ- s অজ্ঞতার ভাণ করছিলুম, কেননা তার সঙ্গে কথা কইতে আমার মন্দ লাগছিল না। আমি ইতিপূর্বে এমন একটি রমণীও দেখিনি, যিনি পুরুষমানুষের সঙ্গে নিঃসঙ্কোচে কথাবার্তা কইতে পারেন, যার সকল কথা সঁকল ব্যবহারের ভিতর কতকটা কৃত্রিমতার আবরণ না থাকে। সাধারণতঃ স্ত্রীলোক-সে যে দেশেরই হোক-আমাদের জাতের সুমুখে মন বে-আব্রু করতে পারে না। এই আমি প্রথম স্ত্রীলোক দেখলুম, যে পুরুষ-বন্ধুর মত সহজ ও খোলাখুলি ভাবে কথা কইতে পারে। এর সঙ্গে যে পর্দার আড়াল থেকে আলাপ করতে হচ্ছে না, এতেই আমি খুসি হয়েছিলুম। সুতরাং এই শিক্ষা ব্যাপারটি একটু লম্বা হওয়াতে আমার কোনও আপত্তি ছিল না । মাথা নীচু করে অনর্গল বকে গেলেও, আমার সঙ্গিনীটি যে ক্রমান্বয়ে বারান্দার দিকে কটাক্ষ নিক্ষেপ করছিল, তা আমার নজর এড়িয়ে যায়নি । আমি সেই দিকে মুখ ফিরিয়ে দেখলুম যে, তার ডিনারের সাণীটি ঘন ঘন পায়চারি করছেন- এবং তঁর মুখে জুলছে চুরোট, আর চোখে রাগ। আমার বন্ধুটিও যে তা লক্ষ্য করছিল, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই,-কেননা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল যে, ঐ ভদ্রলোকটি তার মনের উপর একটি চাপের মত বিরাজ করছেন। সকল বলের গতিবিধির পরিচয় দিতে তার বোধ হয় আধা ঘণ্টা লেগেছিল। তারপরে খেলা সুরু তল । পাঁচ মিনিট না যেতেই বুঝলুম যে, দাবার বিষ্ঠে আঁমাদের দুজনেরি সমান,-এক বাজি উঠতে রাত কেটে যাবে। প্ৰতি ঢাল দেবার আগে যদি পাঁচ মিনিট করে ভাবতে হয়, তারপর আবার চাল ফিরিয়ে নিতে হয়, তাহলে খেলা যে কতটা এগোয় তা ত বুঝতেষ্ট পার। সে যাই হোক, ঘণ্টা অ্যাধেক বাদে সেই জাঁদরেলি-চেতারার সাহেলটি হঠাৎ ঘরে ঢুকে, আমাদের খেলার টেবিলের পাশে এসে দাঁড়িয়ে, অতি বিরক্তির স্বরে আমার খেলার সার্থীকে সম্বোধন করে বল্লেন “তাহলে আমি এখন চলুম!” সে কথা শুনে স্ত্রীলোকটি দাবার ছকের দিকে চেয়ে, নিতান্ত অন্যমনস্কভাবে উত্তর করলেন-“এত শীগগির ?”