পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

俊8 R মনের সে বৎসরের ডাক্তারি-ডায়রি যখন আমি নিজেই পড়তে ভয় পাই, তখন তোমাদের তা পরে শোনাবার আমার তিলমাত্রও অভিপ্ৰায় নেই । এইটুকু বললেই যথেষ্ট হবে যে, আমার মনের অদৃশ্য তারগুলি “রিণী” তার দশ আঙ্গুলে এমনি করে ধরে, সে-মনকে পুতুল নাচিয়েছিল। আমার অন্তরে সে যে-প্রবৃত্তি জাগিয়ে তুলেছিল, তাকে ভালবাসা বলে কি না জানি নে ; এইমাত্র জানি যে, সে মনোভাবের ভিতর অহঙ্কার ছিল, অভিমান ছিল, রাগ ছিল, জেদ ছিল, আর সেই সঙ্গে ছিল করুণ, মধুর, দাস্য ও সখ্য এই চারটি হৃদয়ারস -এর মধ্যে যা লেশমাত্রও ছিল না, সে হচ্ছে দেহের নাম কি গন্ধ। আমার মনের এই কড়িকোমল পর্দাগুলির উপর সে তার আঙ্গুল চালিয়ে যখন-যেমন ইচ্ছে তখন-তেমনি সুর বার করতে পারত। তার আঙ্গুলের টিপে সে সুর কখনও বা অতিকোমল, কখনও বা অতি-তীয়র হত । একটি ফরাসী কবি বলেছেন যে, রমণী হচ্ছে আমাদের দেহের ছায়া। তাকে ধরতে যাও সে পালিয়ে যাবে, আর তার কাছ থেকে পালাতে চেষ্টা কর, সে তোমার পিছু পিছু ছুটে আসবে। আমি বারমাস ধরে এই ছায়ার সঙ্গে অহৰ্নিশি লুকোচুরি খেলেছিলুম। এ খেলার ভিতর কোনও সুখ ছিল না। অথচ এ খেলা সাঙ্গ করবার শক্তিও আমার ছিল না। অনিদ্রাগ্ৰস্ত লোক যেমন যত বেশি ঘুমাতে চেষ্টা করে, তত বেশি জেগে ওঠে,-আমিও তেমনি যত বেশি এই খেলা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করতুম, তত বেশি জড়িয়ে পড়াতুম। সত্য কথা বলতে গেলে, এ খেলা বন্ধ করবার জন্য আমার আগ্রহও ছিল না,--- কেন না। আমার মনের এই নব অশান্তির মধ্যে নব জীবনের তীব্ৰ স্বাদ ছিল । আমি যে শত চেষ্টাতেও “রিণী"র মনকে আমার করায়ত্ত করতে পারি নি, তার জন্য আমি লজ্জিত নই।-কেন না আকাশ বাতাসকে কেউ আর মুঠোর ভিতরে চেপে ধরতে পারে না। তার মনের স্বভাবটা অনেকটা এই আকাশের মতই ছিল, দিনে দিনে তার চেহারা বদলােত। আজ ঝড়-জল বজ-বিদ্যুৎ-কাল আবার চাঁদের আলো, বসন্তের