পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bryr fiğ75ğK বেড়ে চলেছে। মনে পড়ে গেল বৃহদারণ্যক উপনিষদে পড়েছিলুম। যে, অশ্বমেধের অশ্বের “যকৃচ্চ ক্লোমানশ্চ পর্বত”। পীলে ও যকৃত নামক মাংসপিণ্ড দুটিকে পর্বতের সঙ্গে তুলনা করা যে অসঙ্গত নয়, এই প্রথম আমি তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেলুম। মানুষের দেহ যে কতদূর শ্ৰীহীন, শক্তিহীন হতে পারে, তার চক্ষুষ পরিচয় পেয়ে আমি মনে মনে লজ্জিত হয়ে পড়লুম ; এরকম দেহ মনুষ্যত্বকে প্রকাশ্যে অপমান করে। অথচ আমাদের গ্রামের হিন্দুর বীরত্ব এই সব দেহ আশ্রয় করেই টিকে আছে। এরা জাতিতে অস্পৃশ্য হলেও হিন্দু-শরীরে অশক্ত হলেও বীর। কেননা শিকার এদের জাতব্যবসা । এরা বর্ষ। দিয়ে শুয়াের মারে, বনে ঢুকে জঙ্গল ঠেঙ্গিয়ে বাঘ বার করে ; অবশ্য উদরান্নের জন্য। এদের তুলনায়, মাথায় লাল পাগড়ি ও গায়ে সাদা চাপকন পরা—আমার দর্শনধারী সঙ্গী ভোজপুরী দরওয়ানটিকে রাজপুত্রের মত দেখাচ্ছিল। এই সব কৃষ্ণের জীবদের কঁধে চড়ে, বিশ মাইল পথ যেতে প্ৰথমে আমার নিতান্ত অপ্ৰবৃত্তি হয়েছিল। মনে হল এই সব জীৰ্ণ শীর্ণ জীবন্মত হতভাগ্যদের স্কন্ধে আমার দেহের ভর চাপানটা নিতান্ত নিষ্ঠুরতার কার্য হবে। আমি পাল্কিতে চড়তে ইতস্তত করছি দেখে, বাড়ী থেকে যে মুসলমান সর্দারটি এসেছিল, সে হেসে বললে “হুজুর উঠে পড়ুন, কিছু কষ্ট হবে না। আর দেরি করলে বেলা চারটের মধ্যে বাড়ী পৌছতে পারবেন না।” দশ ক্রোশ পথ যেতে দশ ঘণ্টা লাগবে, এ কথা শুনে আমার পাস্কি চড়বার উৎসাহ যে বেড়ে গেল, অবশ্য তা নয়। তবুও আমি দুৰ্গা” বলে হামাগুড়ি দিয়ে সেই প্যাকবাক্সের মধ্যে ঢুকে পড়লুম, কেননা তা ছাড়া উপায়ান্তর ছিল না। বলা বাহুল্য, ইতিমধ্যে নিজের মনকে বুঝিয়ে দিয়েছিলুম যে, মানুষের স্কন্ধে আরোহণ করে যাত্রা করায় পাপ নেই। আমরা ধনীলোকেরা পৃথিবীর দরিদ্র লোকদের কঁধে চড়েই ত জীবনযাত্রা নিৰ্বাহ করছি। আর পৃথিবীতে যে স্বল্পসংখ্যক ধনী এবং অসংখ্য দরিদ্র ছিল, আছে, থাকবে এবং থাকা উচিত, এইত ‘পলিটিকাল ইকনমিীর’