পাতা:গল্পসল্প - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ম্যানেজারবাবু

 আজ তােমাকে যে গল্পটা বলব মনে করেছি সেটা তােমার ভালাে লাগবে না।

 তুমি বললেও ভালো লাগবে না কেন।

 যে-লােকটার কথা বলব সে চিতাের থেকে আসে নি··· কোনাে রানা-মহারানার দল ছেড়ে—

 চিতাের থেকে না এলে বুঝি গল্প হয় না?

 হয় বৈকি সেইটাই তাে প্রমাণ করা চাই। এই মানুষটা ছিল সামান্য একজন জমিদারের সামান্য পাইক। এমন-কি, তার নামটাই ভুলে গেছি। ধরে নেওয়া যাক সুজনলাল মিশির। একটু নামের গােলমাল হলে ইতিহাসের কোনাে পণ্ডিত তা নিয়ে কোনাে তর্ক করবে না।

 সেদিন ছিল যাকে বলে জমিদারী সেরেস্তার ‘পুণ্যাহ’, খাজনা-আদায়ের প্রথম দিন। কাজটা নিতান্তই বিষয়-কাজ। কিন্তু, জমিদারী মহলে সেটা হয়ে উঠেছে একটা পার্বণ। সবাই খুশি— যে খাজনা দেয় সেও, আর যে খাজনা বাক্সতে ভরতি করে সেও। এর মধ্যে হিসেব মিলিয়ে দেখবার গন্ধ ছিল না। যে যা দিতে পারে তাই দেয়, প্রাপ্য নিয়ে কোনাে তাকরার করা হয় না। খুব ধূমধাম, পাড়াগেঁয়ে সানাই অত্যন্ত বেসুরে আকাশ মাতিয়ে তােলে। নতুন কাপড় প’রে প্রজারা কাছারিতে সেলাম দিতে আসে। সেই পুণ্যাহের দিনে ঢাক ঢােল সানাইয়ের শব্দে জেগে উঠে ম্যানেজারবাবু ঠিক করলেন, তিনি স্নান করবেন দুধে। চারি দিকে সমারােহ দেখে হঠাৎ তাঁর মনে হল তিনি তাে সামান্য লােক নন। সামান্য জলে তাঁর অভিষেক কী করে হবে। ঘড় ঘড়া দুধ এল গােয়ালা প্রজাদের কাছ থেকে। হল তাঁর স্নান। নাম বেরিয়ে গেল

৬৪