পাতা:গল্পসল্প - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্পসল্প

চোখ বুলিয়ে নিলেন। বললেন, দেখুন একবার, সহজ কাকে বলে! অভিধানের প্রয়োজনই হয় না।

 সভার লোকেরা বললে, প্রয়োজন হলেই বা পাব কোথায়।

 বাচস্পতি মশায় একটু চোখ টিপে বললেন, ভাবখানা বুঝেছেন তো?

 মথুরবাবু বললেন, বুঝেছি বৈকি। সমুদ্রগুপ্ত অজাতশত্রুকে আচ্ছা করে পিটিয়ে দিয়েছিলেন। আহা বাচস্পতি মশায়, লোকটাকে একেবারে সমুসদ্গারিত করে দিলে গো— একেবারে পরমন্তি শয়নে।

 বাচস্পতি বললেন, ছোটোলাট একবার এসেছিলেন আমাদের পাড়ার স্কুলে বুটের ধুলো দিয়ে যেতে। তখন আমি তাঁকে এই বুগবুলবুলি ভাষার একটা ইংরেজি তর্জমা শুনিয়েছিলুম।

 সভাস্থ সকলেই বললেন, ইংরেজিটা শোনা যাক।

 বাচস্পতি পড়ে গেলেন, দি হাব্বারফ্লুয়াস ইন্ফ্যাচুফুয়েশন অব আকবর ডৰ্বেণ্ডিক্যালি ল্যাসেরটাইজট্ দি গৰ্ব্যাণ্ডিজম অফ হুমায়ুন।– শুনে ছোটোলাট একেরারে টরেটম্ বনে গিয়েছিলেন; মুখ হয়েছিল চাপা হাসিতে ফুস্কায়িত। হেড পেডেণ্ডোর টিকির চার ধারে ভেরেণ্ডম্ লেগে গেল, সেক্রেটারি চৌকি থেকে তড়তং করে উৎখিয়ে উঠলেন। ছেলেগুলোর উজবুম্মুখো ফুড়ফুড়োমি দেখে মনে হল, তারা যেন সব ফিরিচুঞ্চুসের একেবারে চিক্‌চাকস্ আমদানি। গতিক দেখে আমি চংচটকা দিলুম।

 সভাপতি বললেন, বাচস্পতি, এইখানেই ক্ষান্ত দাও হে, আর বেশিক্ষণ চললে পরাগগলিত হয়ে যাব। এখনি মাথাটার মধ্যে তাজ্ঝিম মাজ্ঝিম করছে।

 বাচস্পতি আর কিছুদিন বেঁচে থাকলে সভাপতির ভাষা এতদিনে ওঁদের মুখবুদবুদী শব্দে রঝম্ গঝম্ করে উঠত।

৭২