পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
মানভঞ্জন।
১০৭

বাদিনী চাটুভাষিণী বলিয়া গঞ্জনা করিতে ছাড়িত না; সুধো তখন শত শত শপথ সহকারে নিজের মতের অকৃত্রিমতা প্রমাণ করিতে বসিত, গিরিবালার পক্ষে তাহা বিশ্বাস করা নিতান্ত কঠিন হইত না।

 সুধো গিরিবালাকে গান শুনাইত—“দাসখত দিলাম লিখে শ্রীচরণে”;—এই গানের মধ্যে গিরিবালা নিজের অলক্তাঙ্কিত অনিন্দ্য সুন্দর চরণপল্লবের স্তব শুনিতে পাইত এবং একটি পদলুণ্ঠিত দাসের ছবি তাহার কল্পনায় উদিত হইত—কিন্তু হার, দুটি শ্রীচরণ মলের শব্দে শূন্য হাতের উপরে আপন জয়গান ঝংকৃত করিয়া বেড়ায়, তবু কোন স্বেচ্ছাবিক্রীত ভক্ত আসিয়া দাসখৎ লিখিয়া দিয়া যায় না।

 গোপীনাথ যাহাকে দাসখৎ লিখিয়া দিয়াছে, তাহার নাম লবঙ্গ,—সে থিয়েটারে অভিনয় করে—সে ষ্টেজের উপরে চমৎকার মূর্চ্ছা যাইতে পারে—সে যখন সানুনাসিক কৃত্রিম কাঁদুনীর স্বরে হাঁপাইয়া হাঁপাইয়া টানিয়া টানিয়া আধ-আধ উচ্চারণে “প্রাণনাথ প্রাণেশ্বর” করিয়া ডাক ছাড়িতে থাকে, তখন পাৎলা ধুতির উপর ওয়েষ্ট্‌কোট্‌-পরা, ফুল্‌মোজামণ্ডিত দর্শকমণ্ডলী “এক্সেলেণ্ট্‌” “এক্সেলেণ্ট্‌” করিয়া উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠে।

 এই অভিনেত্রী লবঙ্গের অত্যাশ্চর্য্য ক্ষমতার বর্ণনা গিরিবালা ইতিপূর্ব্বে অনেকবার তাহার স্বামীর মুখেই নিয়াছে। তখনও তাহার স্বামী সম্পূর্ণ রূপে পলাতক হয় নাই। তখন