পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১১৪
গল্প-দশক।

হইয়া বসিয়া রহিল। কিন্তু দৃশ্যপট উঠিল না—শিখিপুচ্ছচূড়া পায়ের কাছে লুটাইল না—কেহ কাফি রাগিণীতে গাহিয়া উঠিল না।

কেন, পূর্ণিমা আঁধার কর লুকায়ে বদন-শশি!

 সঙ্গীতহীন নীরসকণ্ঠে গোপীনাথ বলিল—একবার চাবিটা দাও দেখি!

 এমন জ্যোৎস্নায় এমন বসন্তে এতদিনের বিচ্ছেদের পরে এই কি প্রথম সম্ভাষণ! কাব্যে নাটকে উপন্যাসে যাহা লেখে তাহার আগাগোড়াই মিথ্যা কথা! অভিনয়মঞ্চেই প্রণয়ী গান গাহিয়া পায়ে আসিয়া লুটাইয়া পড়ে—এবং তাহাই দেখিয়া যে দর্শকের চিত্ত বিগলিত হইয়া যায়, সেই লোকটি বসন্তনিশীথে গৃহছাদে আসিয়া আপন অনুপমা যুবতী স্ত্রীকে বলে, ওগো একবার চাবিটা দাও দেখি! তাহাতে না আছে রাগিণী না আছে প্রীতি, তাহাতে কোন মোহ নাই, মাধুর্য্য নাই, তাহা অত্যন্ত অকিঞ্চিৎকর!

 এমন সময়ে দক্ষিণে বাতাস জগতের সমস্ত অপমানিত কবিত্বের মর্ম্মান্তিক দীর্ঘনিশ্বাসের মত হুহু করিয়া বহিয়া গেল —টবভরা ফুটন্ত বেলফুলের গন্ধ ছাদময় ছড়াইয়া দিয়া গেল —গিরিবালার চূর্ণ অলক চোখে মুখে আসিয়া পড়িল এবং তাহার বসন্তীরঙের সুগন্ধি আঁচল অধীরভাবে যেখানে সেখানে উড়িতে লাগিল। গিরিবালা সমস্ত মান বিসর্জ্জন দিয়া উঠিয়া পড়িল।