পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১১৬
গল্প-দশক।

গর্‌গর্‌ করিতে করিতে আসিয়া বলিল—চাবি দাও বলিতেছি নহিলে ভাল হইবে না।

 গিরিবালা উত্তরমাত্র দিল না। তখন গোপী তাহাকে চাপিয়া ধরিল এবং তাহার হাত হইতে বাজুবন্ধ, গলা হইতে কণ্ঠী, অঙ্গুলি হইতে আংটি ছিনিয়া লইয়া তাহাকে লাথি মারিয়া চলিয়া গেল।

 বাড়ির কাহারও নিদ্রাভঙ্গ হইল না, পল্লীর কেহ কিছুই জানিতে পারিল না, জ্যোৎস্নারাত্রি তেমনি নিস্তব্ধ হইয়া রহিল, সর্ব্বত্র যেন অখণ্ড শান্তি বিরাজ করিতেছে। কিন্তু অন্তরের চীৎকারধ্বনি যদি বাহিরে শুনা যাইত তবে সেই চৈত্র মাসের সুখসুপ্ত জ্যোৎস্নানিশীথিনী অকস্মাৎ তীব্রতম আর্ত্তস্বরে দীর্ণ বিদীর্ণ হইয়া যাইত। এমন সম্পূর্ণ নিঃশব্দে এমন হৃদয়-বিদারণ ব্যাপার ঘটিয়া থাকে!

 অথচ সে রাত্রিও কাটিয়া গেল। এমন পরাভব এত অপমান গিরিবালা সুধোর কাছেও বলিতে পারিল না। মনে করিল, আত্মহত্যা করিয়া, এই অতুল রূপ যৌবন নিজের হাতে খণ্ড খণ্ড করিয়া ভাঙ্গিয়া ফেলিয়া সে আপন অনাদরের প্রতিশোধ লইবে। কিন্তু তখনি মনে পড়িল, তাহাতে কাহারও কিছু আসিবে যাইবে না—পৃথিবীর যে কতখানি ক্ষতি হইবে তাহা কেহ অনুভবও করিবে না। জীবনেও কোন সুখ নাই, মৃত্যুতেও কোন সান্ত্বনা নাই।

 গিরিবালা বলিল, আমি বাপের বাড়ি চলিলাম।—তাহার