পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ঠাকুর্দ্দা।
১২৭

বাড়ি খুঁজিয়া পাওয়া যে কত কঠিন, সে বিষয়েও কাহারও সন্দেহ ছিল না—এমন কি আজ ছয় সাত বৎসর সন্ধান করিয়া ভাড়া লইবার মত একটা বড় বাড়ি পাড়ার কেহ দেখিতে পাইল না— অবশেষে ঠাকুর্দ্দা মশাই বলিতেন, “তা হোক্‌ ভাই, তোমাদের কাছাকাছি আছি এই আমার সুখ, নয়নজোড়ে বড় বাড়ি ত পড়েই আছে কিন্তু সেখানে কি মন টেঁকে?”

 আমার বিশ্বাস, ঠাকুর্দ্দাও জানিতেন যে, সকলে তাঁহার অবস্থা জানে, এবং যখন তিনি ভূতপূর্ব্ব নয়নজোড়কে বর্ত্তমান বলিয়া ভান করিতেন এবং অন্য সকলেও তাহাতে যোগ দিত তখন তিনি মনে মনে বুঝিতেন যে, পরস্পরের এই ছলনা কেবল পরস্পরের প্রতি সৌহার্দ্দ্যবশতঃ।

 কিন্তু আমার বিষম বিরক্তি বোধ হইত। অল্প বয়সে পরের নিরীহ গর্ব্বও দমন করিতে ইচ্ছা করে এবং সহস্র গুরুতর অপরাধের তুলনায় নির্ব্বুদ্ধিতাই সর্বাপেক্ষা অসহ্য বোধ হয়। কৈলাস বাবু ঠিক নির্ব্বোধ ছিলেন না, কাজে কর্ম্মে তাঁহার সহায়তা এবং পরামর্শ সকলেই প্রার্থনীয় জ্ঞান করিত। কিন্তু নয়নজোড়ের গৌরব প্রকাশ সম্বন্ধে তাঁহার কিছুমাত্র কাণ্ডজ্ঞান ছিল না! সকলে তাঁহাকে ভালবাসিয়া এবং আমোদ করিয়া তাঁহার কোন অসম্ভব কথাতেই প্রতিবাদ করিত না বলিয়া তিনি আপনার কথার পরিমাণ রক্ষা করিতে পারিতেন না। অন্য লোকেও যখন আমোদ করিয়া অথবা তাঁহাকে