পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ঠাকুর্দ্দা।
১৩১

 শুনিতে পাইলাম, আমার কোন বন্ধুকে তিনি বলিয়াছিলেন, নয়নজোড়ের বাবুরা কখনও কোন বিষয়ে অগ্রসর হইয়া কাহারও নিকটে প্রার্থনা করে নাই—কন্যা যদি চিরকুমারী হইয়া থাকে তথাপি সে কুলপ্রথা তিনি ভঙ্গ করিতে পারিবেন না।

 শুনিয়া আমার বড় রাগ হইল। সে রাগ অনেক দিন পর্যন্ত আমার মনের মধ্যে ছিল—কেবল ভাল ছেলে বলিয়াই চুপচাপ করিয়াছিলাম।

 যেমন বজ্রের সঙ্গে বিদ্যুৎ থাকে, তেমনি আমার চরিত্রে রাগের সঙ্গে সঙ্গে একটা কৌতুকপ্রিয়তা জড়িত ছিল। বৃদ্ধকে শুদ্ধমাত্র নিপীড়ন করা আমার দ্বারা সম্ভব হইত না—কিন্তু একদিন হঠাৎ এমন একটা কৌতুকাবহ প্ল্যান্ মাথায় উদয় হইল, যে, সেটা কাজে খাটাইবার প্রলোভন সম্বরণ করিতে পারিলাম না।

 পূর্ব্বেই বলিয়াছি, বৃদ্ধকে সন্তুষ্ট করিবার জন্য নানা লোকে নানা মিথ্যা কথার সৃজন করিত। পাড়ার একজন পেন্সনভোগী ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট্‌ প্রায় বলিতেন, ঠাকুর্দ্দা, ছোটলাটের সঙ্গে যখনি দেখা হয় তিনি নয়নজোড়ের বাবুদের খবর না নিয়ে ছাড়েন না—সাহেব বলেন, বাঙ্গলাদেশে, বর্দ্ধমানের রাজা এবং নয়নজোড়ের বাবু, এই দুটি মাত্র যথার্থ বনেদী বংশ আছে।

 ঠাকুর্দ্দা ভারি খুসি হইতেন—এবং ভূতপূর্ব্ব ডেপুটি বাবুর