পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
গল্প-দশক।

 বিন্ধ্য অবিবেচক ছিল না, এই জন্য সে তাহার পিতা মাতার প্রতি কোন দোষারোপ করিল না; সে বুঝিল ঘটনাটি সামান্য ও স্বাভাবিক; কিন্তু এ কথাও তাহার মনে হইল যে, তাহার স্বামী শ্বশুরালয়ে বাস করিয়া কুটুম্বের আদর হইতে বঞ্চিত হইতেছেন।

 সেই দিন হইতে প্রতিদিন সে তাহার স্বামীকে বলিতে লাগিল, আমাকে তোমাদের ঘরে লইয়া চল; আমি আর এখানে থাকিব না।

 অনাথবন্ধুর মনে অহঙ্কার যথেষ্ট ছিল কিন্তু আত্মসম্ভ্রমবোধ ছিল না। তাঁহার নিজগৃহের দারিদ্র্যের মধ্যে প্রত্যাবর্ত্তন করিতে কিছুতেই তাঁহার অভিরুচি হইল না। তখন তাঁহার স্ত্রী কিছু দৃঢ়তা প্রকাশ করিয়া কহিল, তুমি যদি না যাও ত আমি একলাই যাইব।

 অনাথবন্ধু মনে মনে বিরক্ত হইয়া তাঁহার স্ত্রীকে কলিকাতার বাহিরে দূর ক্ষুদ্র পল্লীতে তাঁহাদের মৃত্তিকানির্ম্মিত খোড়ো ঘরে লইয়া যাইবার উদ্যোগ করিলেন। যাত্রাকালে রাজকুমার বাবু এবং তাঁহার স্ত্রী, কন্যাকে আরও কিছুকাল পিতৃগৃহে থাকিয়া যাইবার জন্য অনেক অনুরোধ করিলেন; কন্যা নীরবে নতশিরে গম্ভীর মুখে বসিয়া মৌনভাবে জানাইয়া দিল—না, সে হইতে পারিবে না!

 তাহার সহসা এইরূপ দৃঢ়প্রতিজ্ঞা দেখিয়া পিতা মাতার সন্দেহ হইল যে, অজ্ঞাতসারে বোধ করি কোনরূপে তাহাকে