পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৩৬
গল্প-দশক।

 তাহা ছাড়া আর একটি বিষয়ে আজ হঠাৎ দৃষ্টি খুলিয়া গেল। এতদিন আমি কুসুমমণিকে, কোন অবিবাহিত পাত্রের প্রসন্ন দৃষ্টিপাতের প্রতীক্ষায় সংরক্ষিত পণ্য-পদার্থের মত দেখিতাম—ভাবিতাম, আমি পছন্দ করি নাই বলিয়া ও পড়িয়া আছে, দৈবাৎ যাহার পছন্দ হইবে ও তাহারই হইবে। আজ দেখিলাম এই গৃহকোণে, ঐ বালিকামূর্ত্তির অন্তরালে একটি মানব হৃদয় আছে। তাহার নিজের সুখ দুঃখ অনুরাগ বিরাগ লইয়া একটি অন্তঃকরণ একদিকে অজ্ঞেয় অতীত আর একদিকে অভাবনীয় ভবিষ্যৎ নামক দুই অনন্ত রহস্যরাজ্যের দিকে পূর্ব্বে পশ্চিমে প্রসারিত হইয়া রহিয়াছে। যে মানুষের মধ্যে হৃদয় আছে সে কি কেবল পণের টাকা এবং নাক চোখের পরিমাণ মাপিয়া পছন্দ করিয়া লইবার যোগ্য?

 সমস্ত রাত্রি নিদ্রা হইল না। পরদিন প্রত্যুষে বৃদ্ধের সমস্ত অপহৃত বহুমূল্য দ্রব্যগুলি লইয়া চোরের ন্যায় চুপি চুপি ঠাকুর্দ্দার বাসায় গিয়া প্রবেশ করিলাম-ইচ্ছা ছিল কাহাকেও কিছু না বলিয়া গোপনে চাকরের হাতে সমস্ত দিয়া আসিব।

 চাকরকে দেখিতে না পাইয়া ইতস্ততঃ করিতেছি এমন সময় অদূরবর্ত্তী ঘরে বৃদ্ধের সহিত বালিকার কথোপকথন শুনিতে পাইলাম। বালিকা সুমিষ্ট সস্নেহ স্বরে জিজ্ঞাসা করিতেছিল, দাদা মশায়, কাল লাট সাহেব তোমাকে কি বল্লেন? ঠাকুর্দ্দা অত্যন্ত হর্ষিত চিত্তে লাট সাহেবের মুখে প্রাচীন নয়নজোড় বংশের বিস্তর কাল্পনিক গুণানুবাদ বসা-