পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৪০
গল্প-দশক।

অবশেষে যখন তিনি কৌশলে আশ্চর্য্য সুলভ মূল্যে তরফ বাঁকাগাড়ি ক্রয় করিয়া মুকুন্দলালের সম্পত্তিভুক্ত করিলেন, তখন হইতে মুকুলবাবুরা গণ্যমান্য জমিদার শ্রেণীতে প্রতিষ্ঠিত হইলেন। প্রভুর উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ভৃত্যেরও উন্নতি হইল;—অল্পে অল্পে তাঁহার কোঠাবাড়ি, জোতজমা, এবং পূজার্চ্চনা বিস্তার লাভ করিল। এবং যিনি এককালে সামান্য তহশীলদার শ্রেণীর ছিলেন, তিনিও সাধারণের নিকট দেওয়ানজি নামে পরিচিত হইলেন।

 ইহাই ভূতপূর্ব্ব কালের ইতিহাস। বর্ত্তমান কালে মুকুন্দ বাবুর একটি পোষ্যপুত্র আছেন, তাঁহার নাম বিনোদবিহারী। এবং গৌরীকান্তের সুশিক্ষিত নাতজামাই অম্বিকাচরণ তাঁহাদের ম্যানেজারের কাজ করিয়া থাকেন। দেওয়ানজি তাঁহার পুত্র রমাকান্তকে বিশ্বাস করিতেন না—সেই জন্য বার্দ্ধক্যবশতঃ নিজে যখন কাজ ছাড়িয়া দিলেন, তখন পুত্রকে লঙ্ঘন করিয়া নাতজামাই অম্বিকাকে আপন কার্য্যে নিযুক্ত করিয়া দিলেন।

 কাজকর্ম্ম বেশ চলিতেছে; পূর্ব্বের আমলে যেমন ছিল এখনও সকলি প্রায় তেমনি আছে, কেবল একটা বিষয়ে একটু প্রভেদ ঘটিয়াছে; এখন প্রভুভৃত্যের সম্পর্ক কেবল কাজকর্ম্মের সম্পর্ক—হৃদয়ের সম্পর্ক নহে। পূর্ব্বকালে টাকা শস্তা ছিল এবং হৃদয়টাও কিছু সুলভ ছিল, এখন সর্ব্বসম্মতি ক্রমে হৃদয়ের বাজে খরচটা একপ্রকার রহিত হইয়াছে;