পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
প্রতিহিংসা।
১৪১

নিতান্ত আত্মীয়ের ভাগেই টানাটানি পড়িয়াছে, তা বাহিরের লোকে পাইবে কোথা হইতে!

 ইতিমধ্যে বাবুদের বাড়িতে দৌহিত্রের বিবাহে বৌভাতের নিমন্ত্রণে দেওয়ানজীর পৌত্রী ইন্দ্রাণী গিয়া উপস্থিত হইল।

 সংসারটা কৌতূহলী অদৃষ্টপুরুষের রাসায়ণিক পরীক্ষাশালা। এখানে কতকগুলা বিচিত্র-চরিত্র মানুষ একত্র করিয়া তাহাদের সংযোগ বিয়োগে নিয়ত কত চিত্রবিচিত্র অভূতপূর্ব্ব ইতিহাস সৃজিত হইতেছে, তাহার আর সংখ্যা নাই।

 এই বৌভাতের নিমন্ত্রণস্থলে, এই আনন্দকার্য্যের মধ্যে দুটি দুই রকমের মানুষের দেখা হইল এবং দেখিতে দেখিতে সংসারের অশ্রান্ত জালবুনানীর মধ্যে একটা নুতন বর্ণের সূত্র উঠিয়া পড়িল এবং একটা নূতন রকমের গ্রন্থি পড়িয়া গেল।

 সকলের আহারাদি শেষ হইয়া গেলে ইন্দ্রাণী বৈকালের দিকে কিছু বিলম্বে মনিববাড়িতে গিয়া উপস্থিত হইয়াছিল। বিনোদের স্ত্রী নয়নতারা যখন বিলম্বের কারণ জিজ্ঞাসা করিল, ইন্দ্রাণী গৃহকর্ম্মের ব্যস্ততা, শারীরিক অস্বাস্থ্য প্রভৃতি দুই চারিটা কারণ প্রদর্শন করিল, কিন্তু তাহা কাহারও সন্তোষজনক বোধ হইল না।

 প্রকৃত কারণ যদিও ইন্দ্রাণী গোপন করিল তথাপি তাহা বুঝিতে কাহারও বাকি রহিল না। সে কারণটি এই,—মুকুন্দ বাবুরা প্রভু ধনী বটেন কিন্তু কুলমর্য্যাদার গৌরীকান্ত তাঁহাদের অপেক্ষা অনেক শ্রেষ্ঠ। ইন্দ্রাণী সে শ্রেষ্ঠতা ভুলিতে পারে