পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
প্রতিহিংসা।
১৫৫

 বিনোদ ইতিপূর্ব্বে কাজকর্ম্মের কোন খোঁজখবর লইত না—কেবল যখন ব্যবসা উপলক্ষে হঠাৎ অনেক টাকার আবশ্যক হইত তখন গোপনে খাজাঞ্চিকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিত, এখন তহবিলে কত টাকা আছে? খাজাঞ্চি টাকার পরিমাণ বলিলে কিঞ্চিৎ ইতস্ততঃ করিয়া সে টাকাটা চাহিয়া ফেলিত—যেন তাহা পরের টাকা। খাজাঞ্চি তাহার নিকট সই লইয়া টাকা দিত। তাহার পরে কিছু কাল ধরিয়া অম্বিকা বাবুর নিকট বিনোদ কুণ্ঠিত হইয়া থাকিত। কোন মতে তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ না হইলেই আরাম বোধ করিত।

 অম্বিকাচরণ মাঝে মাঝে ইহা লইয়া বিপদে পড়িতেন। কারণ, জমিদারের অংশ জমিদারকে দিয়া তহবিলে প্রায় আমানতী, সদরখাজনা, অথবা আমলাবর্গের বেতন প্রভৃতি খরচের টাকা জমা থাকিত। সে টাকা অন্যায়ব্যয় হইয়া গেলে বড়ই অসুবিধা ভোগ করিতে হইত। কিন্তু বিনোদ টাকাটি লইয়া এমনি চোরের মত লুকাইয়া বেড়াইত, যে, তাহাকে এ সম্বন্ধে কোন কথা বলিবার অবসর পাওয়া যাইত না—পত্র লিখিলেও কোন ফল হইত না—কারণ, লোকটার কেবল চক্ষুলজ্জা ছিল আর কোন লজ্জা ছিল না, এই জন্য সে কেবল সাক্ষাৎকারকে ডরাইত।

 ক্রমে যখন বিনোদ বাড়াবাড়ি করিতে লাগিল তখন অম্বিকাচরণ বিরক্ত হইয়া লোহার সিন্ধুকের চাবি নিজের কাছে, রাখিলেন। আমাদের গোপনে টাকা লওয়া একেবারে বন্ধ