পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৫৬
গল্প-দশক।

হইল। অথচ লোকটা এতই দুর্ব্বলপ্রকৃতি যে, প্রভু হইয়াও স্পষ্ট করিয়া এ সম্বন্ধে কোন প্রকার বল খাটাইতে পারিল না। অম্বিকাচরণের বৃথা চেষ্টা! অলক্ষ্মী যাহার সহায়, লোহার সিন্ধুকের চাবি তাহার টাকা আটক করিয়া রাখিতে পারে। বরং হিতে বিপরীত হইল। কিন্তু সে সকল কথা পরে হইবে।

 অম্বিকাচরণের কড়া নিয়মে বিনোদ ভিতরে ভিতরে অত্যন্ত উত্যক্ত হইয়াছিল। এমন সময় নয়নতারা যখন তাহার মনে সন্দেহ জন্মাইয়া দিল তখন সে কিছু খুসি হইল। গোপনে একে একে নিম্নতন কর্মচারীদিগকে ডাকিয়া সন্ধান লইতে লাগিল। তখন বামাচরণ তাহার প্রধান চর হইয়া উঠিল।

 গৌরীকান্তের আমলে দেওয়ানজি বলপূর্ব্বক পার্শ্ববর্ত্তী জমিদারের জমিতে হস্তক্ষেপ করিতে কুণ্ঠিত হইতেন না এমন করিয়া তিনি অনেকের অনেক জমি অপহরণ করিয়াছেন। কিন্তু অম্বিকাচরণ কখনও সে কাজে প্রবৃত্ত হইতেন না। এবং মকদ্দমা বাধিবার উপক্রম হইলে তিনি যথাসাধ্য আপষের চেষ্টা করিতেন। বামাচরণ ইহারই প্রতি প্রভুর দৃষ্টি আকর্ষণ করিল। স্পষ্ট বুঝাইয়া দিল, অম্বিকাচরণ নিশ্চয় অপরপক্ষ হইতে ঘুষ লইয়া মনিবের ক্ষতি করিয়া আপষ করিয়াছে। বামাচরণের নিজেরও বিশ্বাস তাহাই—যাহার হাতে ক্ষমতা আছে সে যে ঘুষ না লইয়া থাকিতে পারে ইহা সে মরিয়া গেলেও বিশ্বাস করিতে পারে না।