পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
প্রায়শ্চিত্ত।

অথচ এমন ভাবে চলিতেন, যেন তিনি কেবলমাত্র তাঁহার উপার্জ্জনক্ষম স্বামীটির স্ত্রী হইয়াই সমস্ত সংসারটাকে পরম বাধিত করিয়াছেন।

 বিন্ধ্যবাসিনী যখন শ্বশুরবাড়ি আসিয়া গৃহলক্ষ্মীর ন্যায় অহর্নিশি ঘরের কাজে প্রবৃত্ত হইল তখন শুামাশঙ্করীর সঙ্কীর্ণ অন্তঃকরণটুকু কে যেন আঁটিয়া ধরিতে লাগিল। তাহার কারণ বোঝা শক্ত। বোধ করি বড় বৌ মনে করিলেন, মেজবৌ বড় ঘরের মেয়ে হইয়া কেবল লোক দেখাইবার জন্য ঘরকন্নার নীচ কাজে নিযুক্ত হইয়াছে, উহাতে কেবল তাঁহাকে লোকের চক্ষে অপদস্থ করা হইতেছে। যে কারণেই হউক, মাসিক পঞ্চাশ টাকার স্ত্রী কিছুতেই ধনিবংশের কন্যাকে সহ্য করিতে পারিলেন না। তিনি তাহার নম্রতার মধ্যে অসহ্য দেমাকের লক্ষণ দেখিতে পাইলেন।

 এদিকে অনাথবন্ধু পল্লীতে আসিয়া লাইব্রেরী স্থাপন করিলেন; দশ বিশ জন স্কুলের ছাত্র জড় করিয়া সভাপতি হইয়া খবরের কাগজে টেলিগ্রাম প্রেরণ করিতে লাগিলেন; এমন কি, কোন কোন ইংরাজী সংবাদপত্রের বিশেষ সংবাদদাতা হইয়া গ্রামের লোকদিগকে চমৎকৃত করিয়া দিলেন। কিন্তু দরিদ্র সংসারে একপয়সা আনিলেন না, বরঞ্চ বাজে খরচ অনেক হইতে লাগিল।

 একটা কোন চাক্‌রী লইবার জন্য বিন্ধ্যবাসিনী তাহাকে সর্ব্বদাই পীড়াপীড়ি করিতে লাগিল। তিনি কান দিলেন না।