পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ক্ষুধিত পাষাণ।
১৭৭

বসিয়া বসিয়া ঢুলিতেছে। দূতী লঘুগতিতে তাহার দুই পা ডিঙ্গাইয়া পর্দ্দার এক প্রান্তদেশ তুলিয়া ধরিল।

 ভিতর হইতে একটি পারস্য গালিচা পাতা ঘরের কিয়দংশ দেখা গেল। তক্তের উপরে কে বসিয়া আছে দেখা গেল না— কেবল জাফ্রান্‌ রঙের স্ফীত পায়জামার নিম্নভাগে জরির চটি পরা দুইখানি ক্ষুদ্র সুন্দর চরণ গোলাপী মখ্‌মখ্‌ আসনের উপর অলসভাবে স্থাপিত রহিয়াছে দেখিতে পাইলাম। মেজের একপার্শ্বে একটি নীলাভ স্ফটিক পাত্রে কতকগুলি আপেল, নাশ্‌পাতী, নারাঙ্গী এবং প্রচুর আঙুরের গুচ্ছ সজ্জিত রহিয়াছে এবং তাহার পার্শ্বে দুইটি ছোট পেয়ালা ও একটি স্বর্ণাভ মদিরার কাচপাত্র অতিথির জন্য অপেক্ষা করিয়া আছে। ঘরের ভিতর হইতে একটা অপূর্ব্ব ধুপের একপ্রকার মাদক সুগন্ধি ধূম্র আসিয়া আমাকে বিহ্বল করিয়া দিল।

 আমি কম্পিত বক্ষে সেই খোজার প্রসারিত পদদ্বয় যেমন লঙ্ঘন করিতে গেলাম, অমনি সে চমকিয়া জাগিয়া উঠিল-তাহার কোলের উপর হইতে তলোয়ার পাথরের মেজে শব্দ করিয়া পড়িয়া গেল।

 সহসা একটা বিকট চীৎকার শুনিয়া চমকিয়া দেখিলাম, আমার সেই ক্যাম্প্‌ খাটের উপরে ঘর্ম্মাক্তকলেবরে বসিয়া আছি—ভোরের আলোয় কৃষ্ণপক্ষের খণ্ড-চাঁদ জাগরণক্লিষ্ট রোগীর মত পাণ্ডুবর্ণ হইয়া গেছে—এবং আমাদের পাগ্‌লা মেহের আলি তাহার প্রাত্যহিক প্রথা অনুসারে প্রত্যূষের