যথাসময়ে মতিবাবু এবং এই ছেলেটির জন্য পাশাপাশি দুইখানি আসন পড়িল। ছেলেটি তেমন ভোজনপটু নহে; অন্নপূর্ণা তাহার স্বল্প আহার দেখিয়া মনে করিলেন সে লজ্জা করিতেছে; তাহাকে এটা ওটা খাইতে বিস্তর অনুরোধ করিলেন; কিন্তু যখন সে আহার হইতে নিরস্ত হইল, তখন সে কোন অনুরোধ মানিল না। দেখা গেল, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছা অনুসারে কাজ করে, অথচ এমন সহজে করে যে, তাহাতে কোন প্রকার “জেদ্” অথবা “গোঁ” প্রকাশ পায় না। তাহার ব্যবহারে লজ্জার লক্ষণও লেশমাত্র দেখা গেল না।
সকলের আহারাদির পরে অন্নপূর্ণা তাহাকে কাছে বসাইয়া প্রশ্ন করিয়া তাহার ইতিহাস জানিতে প্রবৃত্ত হইলেন। বিস্তারিত বিবরণ কিছুই সংগ্রহ হইল না। মোট কথা এইটুকু জানা গেল, ছেলেটি সাত আট বৎসর বয়সেই স্বেচ্ছাক্রমে ঘর ছাড়িয়া পালাইয়া আসিয়াছে।
অন্নপূর্ণা প্রশ্ন করিলেন, তোমার মা নাই?
তারাপদ কহিল—আছেন।
অন্নপূর্ণা জিজ্ঞাসা করিলেন, তিনি তোমাকে ভালবাসেন না?
তারাপদ এই প্রশ্ন অত্যন্ত অদ্ভূত জ্ঞান করিয়া হাসিয়া উঠিয়া কহিল, কেন ভালবাসবেন না?
অন্নপূর্ণা প্রশ্ন করিলেন, তবে তুমি তাকে ছেড়ে এলে যে?
তারাপদ কহিল, তাঁর আরও চারটি ছেলে এবং তিনটি মেয়ে আছে।