পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
অতিথি।
১৯৭

নদীতীরের অর্দ্ধনিমগ্ন কাশতৃণশ্রেণী, এবং তাহার উর্দ্ধে সরস সঘন ইক্ষুক্ষেত্র এবং তাহার পরপ্রান্তে দূরদিগন্তচুম্বিত নীলাঞ্জনবর্ণ বনরেখা সমস্তই যেন কোন এক রূপকথার সোনার কাঠির স্পর্শে সদ্যো-জাগ্রত নবীন সৌন্দর্যের মত নির্ব্বাক্‌ নীলাকাশের মুগ্ধদৃষ্টির সম্মুখে পরিস্ফুট হইয়া উঠিয়াছিল, সমস্তই যেন সজীব, স্পন্দিত, প্রগল্‌ভ, আলোকে উদ্ভাসিত, নবীনতায় সুচিক্কণ, প্রাচুর্য্যে পরিপূর্ণ।

 তারাপদ নৌকার ছাদের উপরে পালের ছায়ায় গিয়া আশ্রয় লইল। পর্য্যায়ক্রমে ঢালু সবুজ মাঠ, প্লাবিত পাটের ক্ষেত, গাঢ় শ্যামল আমন্‌ ধান্যের আন্দোলন, ঘাট হইতে গ্রামাভিমুখী সঙ্কীর্ণ পথ, ঘনবনবেষ্টিত ছায়াময় গ্রাম তাহার চোখের উপর আসিয়া পড়িতে লাগিল। এই জল স্থল আকাশ, এই চারিদিকের সচলতা, সজীবতা, মুখরতা,—এই উর্দ্ধ অধোদেশের ব্যাপ্তি এবং বৈচিত্র্য এবং নির্লিপ্ত সুদূর, এই সুবৃহৎ, চিরস্থায়ী, নির্নিমেষ, বাক্যবিহীন বিশ্বজগৎ তরুণ বালকের পরমাত্মীয় ছিল;—অথচ সে এই চঞ্চল মাণবকটিকে এক মুহূর্ত্তের জন্যও স্নেহবাহু দ্বারা ধরিয়া রাখিতে চেষ্টা করিত না। নদীতীরে বাছুর লেজ তুলিয়া ছুটিতেছে, গ্রাম্য টাটুঘোড়া সম্মুখের দুই দড়িবাঁধা পা লইয়া লাফ দিয়া দিয়া ঘাস খাইয়া বেড়াইতেছে, মাছরাঙা জেলেদের জাল বাঁধিবার বংশদণ্ডের উপর হইতে ঝপ্‌ করিয়া সবেগে জলের মধ্যে ঝাঁপাইয়া মাছ ধরিতেছে, ছেলেরা জলের মধ্যে পড়িয়া মাতা-