তাহার কণ্ঠাগ্রে ছিল। মতিলাল বাবু চির প্রথামত একদিন সন্ধ্যাবেলায় তাঁহার স্ত্রী কন্যাকে রামায়ণ পড়িয়া শুনাইতেছিলেন; কুশ লবের কথার সূচনা হইতেছে, এমন সময় তারাপদ উৎসাহ সম্বরণ করিতে না পারিয়া নৌকার ছাদের উপর হইতে নামিয়া আসিয়া কহিল, বই রাখুন! আমি কুশ লবের গান করি, আপনারা শুনে যান্।
এই বলিয়া সে কুশ লবের পাঁচালী আরম্ভ করিয়া দিল। বাঁশির মত সুমিষ্ট পরিপূর্ণস্বরে দাশুরায়ের অনুপ্রাস ক্ষিপ্রবেগে বর্ষণ করিয়া চলিল;—দাঁড়ি মাঝি সকলেই দ্বারের কাছে আসিয়া ঝুঁকিয়া পড়িল; হাস্য, করুণা এবং সঙ্গীতে সেই নদীতীরের সন্ধ্যাকাশে এক অপূর্ব্ব রসস্রোত প্রবাহিত হইতে লাগিল,—দুই নিস্তব্ধ তটভূমি কুতূহলী হইয়া উঠিল, পাশ দিয়া যে সকল নৌকা চলিতেছিল, তাহাদের আরোহিগণ ক্ষণকালের জন্য উৎকণ্ঠিত হইয়া সেই দিকে কান দিয়া রহিল; যখন শেষ হইয়া গেল সকলেই ব্যথিত চিত্তে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া ভাবিল, ইহারই মধ্যে শেষ হইল কেন?
সজলনয়না অন্নপূর্ণার ইচ্ছা করিতে লাগিল, ছেলেটিকে কোলে বসাইয়া বক্ষে চাপিয়া তাহার মস্তক আঘ্রাণ করেন। মতিলাল বাবু ভাবিতে লাগিলেন, এই ছেলেটিকে যদি কোন মতে কাছে রাখিতে পারি তবে পুত্রের অভাব পূর্ণ হয়। কেবল ক্ষুদ্র বালিকা চারুশশির অন্তঃকরণ ঈর্ষা ও বিদ্বেষে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল।